আপনি পড়ছেন

ইরানে আগেও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ হয়েছিল কিন্তু দেশটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সে সময় কোন প্রতিবাদ করেননি। তবে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এবারে যে বিক্ষোভ হচ্ছে তাতে সেলিব্রেটি ইরানিরাও সমর্থন দিচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়েই তারা এটি করছেন। এক্ষেত্রে আলি কারিমির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি ইরানের ন্যাশনাল আইকন। তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইরানি ফুটবলার বলা হয়।

ali karimi footballer iran'এশিয়ান ম্যারাডোনা’ খ্যাত আলি কারিমি

কারিমিকে ‘এশিয়ান ম্যারাডোনা’ বা ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’ নামে ডাকা হয়। তিনি বুন্দেসলিগা নামে পরিচিত জার্মান ফুটবল লিগের শালকে এবং বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ইরানি জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ১২৭ ম্যাচে ৩৮ গোল করেছেন। এমন একজন বিখ্যাত ফুটবলার সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সম্প্রতি বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।

আর এক্ষেত্রে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন। বিক্ষোভে গ্রেপ্তার এড়ানোর কিছু নিয়ম তিনি তার লাখ লাখ অনুসারীদের সাথে শেয়ার করেছেন।

২২ সেপ্টেম্বর তিনি এক টুইটে লিখেন, ‘ব্যাংকের [ক্ষতি] করবেন না। হিজাব পরা নারীদের [ক্ষতি] করবেন না। কোরআনকে [অপমান] করবেন না।'

তিনি বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে লেখেন, যারা প্রতিবাদে আপনার সঙ্গ দেয় না তাদের সাথে কিছু করবেন না। যারা এমন কাজ করেছে তাদের অনুসরণ করা উচিত নয়। এটা এক ধরনের ফাঁদ হতে পারে।

তিনি এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকেও রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ইরানে অনেকে সেনাবাহিনীকে জাতীয় সামরিক বাহিনী হিসেবে দেখেন। অপরদিকে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করে আইআরজিসি নামে পরিচিত দেশটির রেভুলেশনারি গার্ড। এরা সবসময় সরকারের পক্ষে কাজ করে।

এর আগেও তিনি বিক্ষোভ এবং সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে থেকেছেন। ২০০৯ সালে ভোটে কারচুপির প্রতিবাদে ইরানিরা রাস্তায় নেমে আসলে তিনি তাদের সমর্থন করেন। সে সময় কারচুপি করে গ্রিন মুভমেন্টের সংস্কারপন্থী মীর হোসেন মুসাভিকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুসাভিকে সমর্থন করে হাতে সবুজ রঙের রিস্টব্যান্ড পরেছিলেন কারিমি। সরকারি সতর্কতা সত্ত্বেও তিনি রিস্টব্যান্ড খুলে ফেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।  

১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। বরাবরের মতো এবারও মাঠে নেমে পড়লেন কারিমি। এমনকি কেউ কেউ সাবেক এই ফুটবল কিংবদন্তিকে বিক্ষোভের প্রধান ব্যক্তিত্ব বলেও উল্লেখ করেছেন।

বিক্ষোভের আগে টুইটারে কারিমির প্রায় ৪০ হাজার ফলোয়ার ছিল। এখন তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৮ লাখের বেশি। ইনস্টাগ্রামে তিন সপ্তাহেরও কম সময়ে তার ফলোয়ার ৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১২ মিলিয়ন হয়েছে।

ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সি সম্প্রতি একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে যেখানে প্রায় ১লাখ মানুষ কারিমিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। কারিমি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এই প্রচারণার খবর পোস্ট করেন। এই বিষয়ে তার অনুসারীদের মতামত জানতে চান। ৭ লাখের বেশি অনুসারী জানিয়েছে, তারা বিক্ষোভের ব্যাপারে কারিমির সাথে একমত। 

এদিকে হামিদ রাসাই নামের একজন সাবেক কট্টরপন্থী এমপি, একটি লাইভ টেলিভিশন সাক্ষাতকারে দাবি করেন, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য কারিমির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত। অবশ্য কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারিমি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এজন্য সরকার তার এসব কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারছে না। 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আলি কারিমি বিস্ময়কর সব কাজ করছেন। তিনি ক্রমাগত টুইট করছেন এবং ভয় না পেয়ে প্রতিবাদকারীদের সাহস দিচ্ছেন। তার সাহস দেখে অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন। এ কারণেই কারিমি আন্দোলনের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন।' 

তিনি উল্লেখ করেন, সরকার সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের চুপ করে থাকতে ভয় দেখিয়েছে। ফলে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। আর কারিমির মত স্পষ্টভাষী একজন সেই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছেন।

এদিকে বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে উঠলে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিক্ষোভকারীদের দমন-পীড়নের ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে উঠে আসার পর অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও কারিমির পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তবে এর জন্য তাদের মূল্যও দিতে হয়েছে। অনেক শিল্পী, ফুটবলারদের সিকিউরিটি সার্ভিস অফিসে তলব করা হয়েছে।

ফুটবলার হোসেন মাহিনী এবং হামিদরেজা আলিআসগারিকে বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় আটক করা হয়েছিল। হোসেন মাহিনিকে কুখ্যাত এভিন কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বিখ্যাত ইরানি ফুটবলার আলি দাই বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে সরকারী কর্মকর্তারা তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে। 

সূত্র: মিডল ইস্ট আই

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.