মাসিক ৩ লাখ টাকায় পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয় কেএনএফ

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, বোমা তৈরিসহ পাঁচ ধরনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল ‘হিজরতের’ নামে ঘরছাড়া তরুণরা। প্রশিক্ষণ শেষে নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। শুক্রবার, ২১ অক্টোবর দুপুর ১২টায় বান্দরবান জেলা পরিষদের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা

বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ সাত জঙ্গি ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কেএনএফ হলো পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন।

গ্রেপ্তাররা হলো- পিরোজপুরের শাহ আলমের ছেলে ইমরান হোসাইন ওরফে শাওন, সুনামগঞ্জের মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক, ঝিনাইদহের মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে কাওসার শিশির, সিলেট বিয়ানীবাজারের ফয়জুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহমেদ ওরফে জনু, বরিশালের নয়ন মৃধার ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী, সিলেটের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পী, সিলেটের চাতকের আবদুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া।

গ্রেপ্তার কেএনএফের সদস্যরা হলো- রোয়াংছড়ির বাজার এলাকার লালমুন সয় বমের ছেলে জৌথান স্যাং বম, লালমিন সম বমের ছেলে স্টিফেন বম ও জিক বিল বমের ছেলে মালসম বম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি এসবিবিএল কার্তুজ বন্দুক, ৫০টি গুলি, ৬২টি কার্তুজের খাপ, ছয়টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), একটি দেশীয় পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি, ইউনিফর্মসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় কেএনএফের একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৫০ জনের বেশি জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এ ছাড়া ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নামের জঙ্গি সংগঠনের আমিরের নাম ও শুরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছয়জনের নাম জানিয়েছে।

র‍্যাবের ভাষ্যমতে, প্রাথমিকভাবে উগ্রবাদী এ সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণদের লক্ষ্য বানায়। এরপর তাদের নানা ধরনের ভিডিও ও ধর্মীয় বিষয়ের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে। তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলতে বিভিন্নভাবে মগজধোলাই করা হতো।

র‍্যাব বলছে, চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো পাহাড়ে। সেখানে অস্ত্র চালানো, বোমা তৈরি ছাড়াও চোরাগুপ্তা হামলা, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চলছিল। পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা মাসিক তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিতো।