সরকারকে ফখরুল: সব বন্ধ করেও জনস্রোত আটকাতে পারেননি

খুলনায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পরও সমাবেশে বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,  বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবকিছুই বন্ধ করে দিলেন। মামলা, হামলা, হয়রানি করলেন, তবুও জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা দমিয়ে  রাখতে পারলেন না। শতবাধা পেরিয়ে তারা সমাবেশে এসেছেন।

শনিবার, ২২ অক্টোবর দুপুরে খুলনা নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্তরে অনুষ্ঠিত দলের বিভাগীয় সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

আজকের এই সমাবেশকে ঘিরে খুলনায় দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বাস, লঞ্চ। আজ ট্রেন ও ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া গত দুই দিনে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নেতাকর্মীদের সীমাহীন বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন পুলিশ ভাইদের কাছে জানতে চাই, তখন তারা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, সমস্যা নাই। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, বিএনপির সমাবেশে বাধা দেওয়া হয় না, বরং সহযোগীতা করা হয়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন- কি সহযোগীতা করছেন আপনারা? স্টেশনে নামার সাথে সাথে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছেন। আমাদের চোখের সামনে আহত করেছেন, আপনারা কিছুই বলেননি, খেয়াঘাটে উল্টো গ্রেপ্তার করেছেন। যাতে সমাবেশে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পারেননি।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা অসাধ্যকে সাধ্য করেছেন। কিছুই চলতে দেয়নি, তবু আপনাদের গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই তাকে কোনো কিছুতেই আটকিয়ে রাখা যায় না। আপনারা সেটাই প্রমাণ করলেন।’

তিনি বলেন, গত দুই দিনে ৫০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী। রূপনগরে ২০ জন গুলিবিদ্ধ, কেশবপুরে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ, মোংলায় ট্রলারে আসা প্রায় ১০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসময় ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়া হয়। রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় ১০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাগেরহাটের মিছিলে ৭০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫০ জন। নগরের ৫ ও ৭ নম্বর ঘাটে আসা ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রলার ডুবির ঘটনায় এক কর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। খুলনা রেলস্টেশনে নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।

এই যে এত মানুষের ওপর হামলা, মামলা গ্রেপ্তার হলো, কেন হলো? এই প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকের এই সভা একটা প্রতীক মাত্র। এই প্রতীক হচ্ছে, আমাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, বাসস্থানের অধিকার। সেই অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই সভা।’

এই ‘অবৈধ’ সরকার দেশকে নরকে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ সরকার আমদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে, দেশের সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে, এর পেছনে শুধু একটাই কারণ -তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি ২০১৪ সালে ভোট দিতে পেরেছিলেন? ২০১৮ সালে? উপস্থিত জনতা ‘না’ ধ্বনি উচ্চারণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনতো আবার আসছে, ২০২৩ সালে। সেই নির্বাচনেও একই ভাবে ক্ষমতায় যাওয়া চেষ্টা করছে সরকার। তারা একটা নির্বাচন কমিশন করেছে। সেই কমিশন আপনারা মানেন?’

এই নির্বাচন কমিশন নিজেদের ভালো দেখানোর জন্য বিভিন্ন রকমের কৌশল অবলম্বন করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কমিশন বলছে নির্বাচন ইভিএমে হবে। গাইবান্ধায় নির্বাচন স্থগিত করে বলছে, আমরা ভালো করেছি। আরে আপনাদেরকেতো ডিসি-এসপিরাই মানেন না। আপনাদের বিরুদ্ধে এখন আওয়ামী লীগই বলছে, ভোট চুরি করে আপনারা ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন। তো সেই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে। এখন আমরা বলতে চাই কেন? আপনি তো ঘোষণা দিয়েছেন যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’ তারা জাতির সামনে এই মিথ্যা কথাই প্রচার করে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, এখন বলছে, দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে।’