সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ৩৫ জনের প্রাণহানি

সারাদেশে ৩৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কাছে সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। ভোলায় পানিতে ডুবে ও গাছচাপা পড়ে চারজন এবং কুমিল্লায় গাছচাপা পড়ে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইলে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে দুইজন, নড়াইলে এক নারী, বরগুনায় এক নারী, সিরাজগঞ্জে মা-ছেলে, গোপালগঞ্জে দুই নারী, নোয়াখালীতে এক শিশু, , শরিয়তপুরে এক নারী, পটুয়াখালীতে এক ব্যক্তি, গাজীপুরে এক শিশু, মুন্সিগঞ্জে মা-মেয়ে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ও ঝালকাঠিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

দেশের অন্তত ১৬ জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার রাতে এ ড্রেজারডুবি ঘটে। নিহত শ্রমিকদের সবার বাড়ি পটুয়াখালীর জৈনকাঠী এলাকায়।

ভোলা সদরে সোমবার রাতে দমকা হাওয়ায় গাছের চাপায় প্রাণ যায় বিবি খাদিজা নামের এক নারীর। চরফ্যাশনে গাছের ডাল পড়ে মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. মাইনুদ্দিন। ভোলা সদরের চেউয়াখালী গ্রামের মফিজুল ইসলাম ঘরচাপায় এবং লালমোহনের ফাতেমাবাদ গ্রামের ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ঝড়ের কবলে পড়ে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার শিকার হয়। মাইক্রোবাসে থাকা পুলিশের দুই কনস্টেবল নুরুল ইসলাম ও মো. সোহেল এবং আসামি লালন নিহত হন। দুই নারায়ণপুর তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্য।

এছাড়া টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া এলাকায় ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকে যাওয়ায় আইপিএস সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা যান শরীফ ফকির।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখাল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার ও চার বছরের মেয়ে নুসরাত।

নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার রাতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম। তার বাড়ি বাগেরহাটের অর্জনবাহার গ্রামে।

বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল ঢেউয়ে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলে মারা গেছে। সোমবার রাতে জেলা সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মোহনপুর গ্রামের খোকন হোসেনের স্ত্রী ও শিশুসন্তান।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী শারমিন ও বাঁশবাড়ির চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম।

ঝড়ের সময় রান্নাঘরের ওপর গাছ পড়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সানজিদ ওই গ্রামের মো. আবদুল্লাহর ছেলে।

শরীয়তপুরে গাছচাপা পড়ে সাফিয়া বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি জাজিরার সিডারচরের হালান মুসল্লির স্ত্রী।

কক্সবাজারের টেকনাফে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। টেকনাফ বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজের ডেক থেকে পড়ে শৌমিং (৭১) নামের মিয়ানমার নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের সময় সোহেনা (৯) নামে নিখোঁজ এক শিশুর লাশ টেকনাফ পৌরসভার পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

পটুয়াখালী সদরের প্রতাপপুর খেয়াঘাট এলাকায় লোহালিয়া নদীতে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন শ্রমিক নুরুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকালে তার লাশ উদ্ধার হয়।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ইকুরিয়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ঘরচাপায় আনিসুর নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বসতঘরে গাছ ভেঙে পড়লে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন কনকসার এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা বেগম ও তার মেয়ে সুরাইয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গাছের চাপা পড়ে জয়নাল আবেদীন নামের এক তরুণ মারা গেছে। আহত হয়েছেন জয়নালের স্ত্রী নিপা আক্তার।

ঝালকাঠির নলছিটিতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পানিতে পড়ে মারা যান বাবুল সিকদার (৪৫) নামে এক কৃষক।