রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক: জবাব দিলো তুরস্ক

তুরস্ক-রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্কে নজরদারি বাড়ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তুরস্ক রাশিয়ার জন্য পেছনের দরজা হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কিছু কর্মকর্তা। চলতি বছর তুরস্কের ব্যাংকগুলোতে বিরাট অঙ্কের অর্থ আন্তঃপ্রবাহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তুরস্কের অর্থমন্ত্রী নুরুদ্দীন নেবাতি।

আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পাশাপাশি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত বোঝাপড়া ভালো

তুরস্কের অর্থমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংযোগ সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক। দেশের ভেতরে-বাইরে বিরোধী পক্ষগুলো বিষয়টি নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তুলছে। এটা সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ একটি সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থায় তুরস্ক খুব সতর্কতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার লঙ্ঘন হবার মতো কোনো কাজ আমরা করি না। এ বিষয়ে আমরা খুব স্পষ্ট। তুরস্কে যে অর্থ আসছে তা আইনি পথে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ কর্মকর্তারা আক্ষেপ করেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধে অংশ না নিয়ে তুরস্ক মস্কোর উপর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে তুরস্ক রাশিয়ার জন্য পেছনের দরজা হিসেবে কাজ করছে বলে অনেকের উদ্বেগ। নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য লঙ্ঘনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে ইইউ কর্মকর্তারা ঘনঘন তুরস্ক সফর করছেন। একই ইস্যুতে এবার তুরস্ক সফরে আসছেন ইইউর নেইবারহুড অ্যান্ড এনলার্জমেন্ট কমিশনার অলিভার ভারহেলি।

তুরস্কের অর্থনীতি বৈদেশিক পুঁজি আন্তঃপ্রবাহের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। কমোডিটি বাজারের উর্ধ্বগতি, ডলারের চাঙ্গাভাব এবং প্রথাবিরোধী আর্থিক ও মুদ্রানীতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান বাজার তুরস্ক ছেড়ে গেছেন। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় তুরস্কের চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিলেও চলতি বছর তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ ভালোভাবেই বিষয়টি সামাল দিয়েছে।

তুরস্কের চলতি হিসাব ঘাটতি সামাল দিতে সহায়তা করেছে এ বছর দেশটির আর্থিক খাতে নীট তহবিলের উল্লেখযোগ্য আন্তঃপ্রবাহ। বছরের প্রথম আট মাসে এমন তহবিল এসেছে মোট ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। একই সময়ে তুরস্কের চলতি হিসাব ঘাটতি ছিল ৪ হাজার কোটি ডলার। নীট আন্তঃপ্রবাহের সুবাদে এ ঘাটতির ৭০ শতাংশ পুরণ করেছে তুরস্ক। এই ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়েই পশ্চিমাদের যত প্রশ্ন। তারা মনে করছেন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ নাগরিকরা এ তহবিল তুরস্কে সরিয়েছে।

তুর্কি অর্থমন্ত্রী নুরুদ্দীন নেবাতি বলেন, যে আন্তঃপ্রবাহ ঘটেছে তার একটি বড় অংশ হচ্ছে হিসাবের বাইরে থাকা পর্যটন খাতের আয়। তুরস্কে বিদেশি পর্যটকের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রুপ হচ্ছে রুশ নাগরিকরা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা আর্থিক খাত ব্যবহার করতে পারেনি, ব্যাংকের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। এ কারণে তারা নগদ অর্থ পরিশোধ করেছে।

তিনি বলেন, বিপূল পরিমাণ আন্তঃপ্রবাহের অপর কারণ হলো তুরস্ক এখন যুদ্ধে ঘেরাও হওয়া একটি দেশ। আমাদের সীমান্ত লাগোয়া রাশিয়া, ইউক্রেন, ইরাক, সিরিয়া সবখানে যুদ্ধ চলছে। এসব দেশে সক্রিয় তুর্কি কোম্পানি ও নাগরিকরা তাদের আয় দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর আয়ের একটি অংশ এসেছে নগদ অর্থ হিসেবে। পশ্চিমারা যদিও বলছে নগদ অর্থ হওয়ায় তহবিলের উৎস বের করা কঠিন পড়েছে, তবে আমরা বলছি এ অর্থের পুরোটাই বৈধ।