বাদ পড়বেন ১৫০ এমপি, মনোনয়নে লাগবে ৪ যোগ্যতা!

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সহজ হবে না, এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। অযোগ্যদের নিয়ে নিবার্চনে লড়তে চান না তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার প্রার্থী নির্বাচনে আরও সচেতন থাকবে দলটি। প্রার্থী নির্বাচনে দেখা হবে চার যোগ্যতার মাপকাঠি। সেই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে মনোনয়ন। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেছেন, ‘এবার প্রার্থী নির্বাচনে কঠোর হবে দল। মনোনয়ন প্রত্যাশীর জনপ্রিয়তা, নিজ দলের নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক, সংসদ সদস্য হওয়ার পর দায়িত্ব পালনে অনিয়ম-অপকর্মে জড়িয়েছেন কিনা এবং তার কারণে দলে উপদল হয়েছে কিনা, এসব বিবেচনায় নিয়ে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে চার যোগ্যতা ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাদের এসব যোগ্যতা থাকবে না, তারা নৌকার কান্ডারি হতে পারবেন না। যত বড় নেতাই হন মনোনয়ন পাবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। এবার নতুনদের সম্ভাবনা বেশি।’

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত থাকা কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীকে নিজের যোগ্যতায় টিকে আসতে হবে। নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থীকে পাশ করিয়ে দেবেন এমন আশা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। যোগ্যতা না থাকলে মনোনয়ন পাবেন না। ইতোমধ্যে সংসদ সদস্যদের নিয়ে জরিপ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এমপিরা মনোনয়ন পাবেন তাদের কর্মগুণে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা এমপিরা বুঝেন না নির্বাচন কি জিনিস। তাদের বোঝানো দরকার।’

এছাড়া গত নির্বাচনগুলোতো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিরা ক্ষমা চাইলে তাদের ক্ষমা করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এদিকে দলের পক্ষ থেকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নির্বাচন এলেই শুধু শোনা যায়, ‘অযোগ্যরা বাদ পড়বেন, নতুনরা আসবেন’। কার্যত এমন কিছু হয়না। পরিস্থিতি এমন যে, দলের কর্মীরাই এসব কথা বিশ্বাস করেন না। তাদের দাবি, ২০১৪-২০১৮ সালের নির্বাচনেও বাদ দেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু সেটা না করে বিতর্কিত এমপিদের ফের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ‘এবার অবশ্যই অনেক পরিবর্তন হবে।’

অযোগ্যদের বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে কর্মীদের অনাস্থার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা বলেন, ২০১৮ সালে প্রায় ১০০ এমপিকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেটা আটকে দেয় একটি গ্রুপ। তারা দলীয় প্রধানকে বোঝায় যে, এই মুহূর্তে কোনো এমটিকে বাদ দিলে তারাই দলীয় প্রার্থীকে হারাতে উঠেপড়ে লাগবে। এই নিয়ে আরও কিছু যুক্তিও তারা শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর পাঁচ নেতা মনে করেন, আগেরবার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে গেলেও দ্বাদশ নির্বাচনে বাদ পড়বেন ১৫০ এমপি। শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্তকে কোনো মহলই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ মাঠ পর্যায়ে এমপিদের নিয়ে জরিপ চলছে। নির্ভুল প্রতিবেদনের ইপর ভিত্তি করেই তা করা হবে।

এ বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘ সাত আট মাস আগেই এক সংসদীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছিলেন দ্বাদশ নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ দলীয় এমপিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’