তথ্যমন্ত্রী: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

ভারত সফররত বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা একই সাথে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক শুধু তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুতে আবদ্ধ নয় বলেও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

নয়াদিল্লিতে প্রেস ক্লাবে ড. হাছান মাহমুদ

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ভারতের প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতার সময় তথ্যমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। আগামী বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এ অবস্থায় এ ধরনের মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারতের রাজনৈতিক ও সর্বাত্মক সমর্থন ছাড়া কখনোই বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব হবে না। একটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আর আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও জরুরি। আমি ভারতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

আন্তঃসীমান্ত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ড. মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক খুবই বৈচিত্র্যময়, এটা শুধু তিস্তার পানি বণ্টনের ওপর নির্ভর করে না। আমরা অনেক কিছু শেয়ার করছি। বাংলাদেশ ও ভারত এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে এবং সেখানে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে।

এক্ষেত্রে ভারতের সংবিধানেরও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আশা করি সব ধারা-পদ্ধতি অনুসরণ করে ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ভারতের সংবিধানের অধীনে, আন্তঃসীমান্ত নদীর জল বণ্টনের চুক্তির জন্য রাজ্য সরকারগুলোর সম্মতি প্রয়োজন।

মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো হামলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কি না জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা সংখ্যালঘুদের টার্গেট করতে চায় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে চায় তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

সরকার হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজা প্যান্ডেলের সংখ্যা ৭০০টি বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য সংখ্যালঘু শব্দটি উচ্চারণ করতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ সংখ্যালঘু নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করবেন না, আপনি মাটির সন্তান, এটা আপনার দেশ। আর বাংলাদেশের সংবিধানে সবার সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী সেখানে আরও বলেন, এসব লোক ধর্মান্ধতাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। গত বছরের দুর্গাপূজার সময়ের ঘটনার জন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুয়া খবর প্রচারকে দায়ী করেন। এ সময় তিনি ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসাবেও বর্ণনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নিযুক্ত ডেপুটি হাই কমিশনার নুরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।