‘ভয় দেখাতে’ সুপারসনিক বোমারু বিমান ওড়াল যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সপ্তাহব্যাপী বিমান মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রেক্ষিতে মহড়াটি চালানো হলেও পিয়ংইয়ং এ মহড়ার মধ্যে নিজেদের শক্তি আরও বেশি করে প্রদর্শন করেছে। প্রায় প্রতিদিনই একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অতিষ্ট করে তুলেছে দুই মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে। এ অবস্থায় তাদের সাহস যোগাতে এবং পিয়ংইয়ংকে ভয় দেখাতে সুপারসনিক বোমারু বিমান উড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর আল জাজিরা।

বি-১বি বোমারু বিমান

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবাহিনীর বর্ধিত যৌথ মহড়ার শেষ দিন গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি বি-১বি বোমারু বিমান মহড়ায় অংশ নেয়। প্রতি ঘণ্টায় এর গতি ১ হাজার ২৩৬ কিলোমিটার। এর আগে ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার একের পর এক সামরিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারসনিক বোমারু বিমান বি-১বি দেখা গিয়েছিল। তবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা এবং করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বড় পরিসরের সামরিক মহড়া বন্ধ ছিল।

উত্তর কোরিয়া মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-১বি বোমারু বিমান থেকে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, অনেক আগেই তারা এই বোমারু বিমানের সংস্কার করেছে। এরপর থেকে এই বোমারু বিমান থেকে এখন শুধু প্রচলিত অস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়।

দ্য ভিজিল্যান্ট স্টর্ম

এদিকে গতকাল শনিবারও উত্তর কোরিয়া স্বল্পপাল্লার চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। পিয়ংইয়ং অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত্র করার কৌশল হাতে নিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের উসকানি দেওয়া হলে উত্তর কোরিয়া একই রকম আরও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

সম্প্রতি দ্য ভিজিল্যান্ট স্টর্ম নামে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ বিমান মহড়া চালায়। ২৪০টি বিমানের এ মহড়া গত শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় তারা এ মহড়ার মেয়াদ একদিন বৃদ্ধি করে। আর সে দিনই বোমারু বিমান উড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের চারটি বোমারু বিমান এনে গুয়ামে রেখেছে।

সাম্প্রতিক যৌথ মহড়ার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকেও দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। গত শুক্রবার পিয়ংইয়ংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। উত্তর কোরিয়া তার সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা স্বার্থ লঙ্ঘনের জন্য শত্রু শক্তির যেকোনো প্রচেষ্টার কঠোর পাল্টা জবাব দেবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলেন, উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর একটি দেশ হিসেবে মেনে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করার চেষ্টা করছে পিয়ংইয়ং। কারণ সেটি হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে সহজেই অর্থনৈতিক ও সামরিক ইস্যুতে সমঝোতা করতে আলোচনায় বসানো যাবে।