দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে যে কথা হলো

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গতকাল এক সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন। মিশরের শারম আল শায়খে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনের ভেন্যুর একটি করিডরে তাদের দেখা হয়। এ সময় দুই প্রেসিডেন্টের করমর্দন ও কথোপকথনের ভিডিও শেয়ার করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। দুই নেতার আলাপচারিতার ধরন দেখে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক লক্ষ্য নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন পর্যবেক্ষকরা।

জলবায়ু সম্মেলনের এক ফাঁকে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন ফ্রান্স ও ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট

ভিডিওতে দেখা যায়, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে দেখতে পেয়ে হাত বাড়িয়ে দেন মাখোঁ। এরপর দীর্ঘ করমর্দনের মধ্যেই তাদের কথোপকথন চলতে থাকে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানতে চান- কেমন আছেন? ওখানে (ভেনিজুয়েলায়) কি অবস্থা? জবাবে মাদুরো বলেন- দারুণ, দিনদিন ভালো হচ্ছে সবকিছু। আপনি কখন বেড়াতে আসবেন? এ সময় মাখোঁ বলেন- ভালো কথা, একটা পথ তো পেতেই হবে। মাদুরো তখন বলেন- আমাদের দুজনেরই কমন ভালো বন্ধু আছে।

প্রসঙ্গত, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সাবেক এমপি হুয়ান গুয়াইদোকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প আমলে গুয়াইদোকে সেনা বিদ্রোহের মাধ্যমে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর চেষ্টাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় গতকালের কথোপকথনের শুরুতে মাদুরোকে ‘জনাব প্রেসিডেন্ট’ অভিহিত করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্পষ্টত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।

এমএসএনবিসি জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আগামী সপ্তাহে প্যারিস যাচ্ছেন ভেনিজুয়েলার প্রতিবেশী চার দেশের নেতারা। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ মানুয়েল লোপেজ ওবরাদোর, চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিচ ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে নিয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ফরাসি নেতা ভেনিজুয়েলার সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের উপায় নিয়ে কথা বলবেন। সেদিকে ইঙ্গিত করেই গতকাল তিনি মাদুরোকে ‘একটা পথ তো পেতেই হবে’ মন্তব্য করেন।

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ইউরোপ আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এ কথা শুনে মাদুরো বলেন- ফ্রান্সকে সেখানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। জবাবে মাখোঁ বলেন- আমরা চেষ্টা করছি। ভালো লাগতো যদি আমরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে পারতাম এবং দ্বিপক্ষীয় একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারতাম। এটা আমাদের দেশের জন্য এবং পুরো অঞ্চলের জন্য ভালো হতো।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথার জবাবে মাদুরো বলেন, অ্যাট ইওর সার্ভিস। এ কনফারেন্সে আমাদের প্রতিনিধি হোর্হে রদ্রিগেজ। আপনি তার সঙ্গে পূর্ণ আস্থা নিয়ে কথা বলতে পারেন। এ সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লে মাদুরো আবার বলেন, তিনি (রদ্রিগেজ) আমাদের পার্লামেন্টের স্পিকার।

বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ‘আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে’ এমানুয়েল মাখোঁর এ আগ্রহকে কেউ কেউ ইউরোপের নজিরবিহীন জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণ ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা মনে করছেন। কারণ গত মাসে ব্রাসেলসে এক অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে চড়া দামে জ্বালানি কেনার বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বাজার দরের চেয়ে চার গুন বেশি দামে এলএনজি কিনতে হলে সেটা বন্ধুত্ব নয়।

কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে মাখোঁ বলেন- আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কয়েকদিন পর প্যারিস যাবেন। এ কথা শুনে মাদুরো বলেন- হুম, আমি খবরে পড়েছি। খুব ভালো। দারুণ কিছু হবে। এ পর্যায়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে বলেন- প্রেসিডেন্ট, এটা শেষ হলে আমি আপনাকে টেলিফোন করবো। মাদুরো তখন হেসে বলেন, দারুণ। শুভকামনা রইল। মাখসি বকু (অনেক ধন্যবাদ)।