হুমকি-ধমকির অভিযোগে ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদত্যাগ

যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের মন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন পদত্যাগ করেছেন। সহকর্মী এমপি, হুইপকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। খবর বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।

গ্যাভিন উইলিয়ামসন

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গ্যাভিন সাবেক চিফ হুইপ ওয়েন্ডি মর্টনের কাছে বেশকিছু অপমানজনক মেসেজ পাঠিয়েছেন। আরেকজন এমপি দাবি করেন, গ্যাভিন তাদেরকে নিজ নিজ গলা কেটে ফেলতে বলেছিলেন। এই দুজন গ্যাভিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করেন।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪৬ বছর বয়সী গ্যাভিন উইলিয়ামসন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। তিনি বলেন, আমি এই দাবিগুলো খণ্ডন করছি, তবে আমি স্বীকার করি, ব্রিটিশ সরকার জনগণের জন্য যেসব ভাল কাজ করছে, এই বিষয়টি তার জন্য একটি বিভ্রান্তিকর ইস্যু হয়ে উঠছে। আমি তাই সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি এতে পুরো বিষয়টি সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারবে।

ঋষি সুনাক ও গ্যাভিন উইলিয়ামসন

পদত্যাগপত্রে তিনি আরও বলেন, তিনি সত্যিকারের দুঃখ নিয়ে পদত্যাগ করছেন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পুরোপুরি সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেন। ঋষি সুনাক তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, তিনিও অত্যন্ত দুঃখের সাথে এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। একইসাথে তিনি গ্যাভিনকে তার ব্যক্তিগত সমর্থন ও আনুগত্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে রক্ষণশীল সরকার ও দলের প্রতি আপনার অবদান প্রশংসনীয়।

বরিস জনসনের সরকার ভেঙে যাওয়ার পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অংশ নেওয়া ঋষি সুনাকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন গ্যাভিন উইলিয়ামসন। সে দফায় ঋষি আরেক প্রার্থী লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান। তবে ৪৪ দিনের মাথায় লিজ ট্রাস পদত্যাগ করলে ফের ঋষি সুনাকের সামনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ খুলে যায়। এ দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েই ঋষি সুনাক গ্যাভিনকে ক্যাবিনেট অফিস মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।

সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম সানডে টাইমসে টোরি সহকর্মী এবং সাবেক চিফ হুইপ ওয়েন্ডি মর্টনের কাছে তার পাঠানো ধমকিপূর্ণ অনেকগুলো মেসেজ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে গ্যাভিন ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে পড়েন। গত সোমবার একজন প্রবীণ সরকারি কর্মচারী অভিযোগ করেন, গ্যাভিন উইলিয়ামসন তাদের ধমক দিয়েছিলেন এবং নিজেদের গলা কেটে ফেলতে বলেছিলেন। এছাড়া ২০১৫-১৭ মেয়াদে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অ্যান মিল্টন একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, গ্যাভিনের আচরণ হুমকিপূর্ণ ও ভীতিকর ছিল।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানান, তিনি এ রকম কিছু একটা হয়েছিল জানতেন। কিন্তু সে মেসেজগুলোতে কী বলা হয়েছিল, তা সম্পর্কে তার ধারণা ছিল না।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় মেতেছেন বিরোধী দলগুলো। লেবার ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেনার বলেছেন, এটি ঋষি সুনাকের দুর্বল বিচার এবং দুর্বল নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ। দেশজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের সময় পরিবারগুলো যখন সংগ্রাম করছে, তখন টোরি সরকার আরেকটি বিশৃঙ্খলার জন্ম দিল।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট ডেপুটি লিডার ডেইজি কুপার ঋষি সুনাকের সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি কেন গ্যাভিন উইলিয়ামসনকে নিয়োগ করেছিলেন, তারপর তাকে বরখাস্ত করার পরিবর্তে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সে সম্পর্কে তার জবাব দেওয়া উচিত। একটি সৎ সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তা এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা ছাড়লেন গ্যাভিন উইলিয়ামসন। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের সম্পৃক্ততার বিবরণ ফাঁস হওয়ার পরে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই বছর বরিস জনসন তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু এ-লেভেল পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট গোলযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ২০২১ সালে পদচ্যুত হন।