অবশেষে টার্মিনালেই মারা গেলেন তিনি!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
একটানা ১৮ বছর বিমানবন্দরের টার্মিনালে কাটিয়ে দেওয়া মেরহান করিমি নাসেরি টার্মিনালে এসেই মারা গেছেন। প্যারিস বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, শনিবার দুপুরের দিকে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ২-এ অবস্থানরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। খবর আরব নিউজের।
মেরহান করিমি নাসেরির ২০০৪ সালের একটি ছবি
মেরহান করিমি নাসেরি এক সময় আইনগত ঝামেলার কারণে প্যারিসের চার্লস দে গল বিমানবন্দরে থাকতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন পরে আইনি ঝামেলা মিটলেও তার আর বাইরে যাওয়া হয়নি। বিমানবন্দরেই তিনি বসবাস করতে থাকেন। এভাবে জীবনের ১৮টি বছর তিনি পার করে দেন প্যারিসের বিমানবন্দরেই। তার এই ঘটনা নিয়ে এক সময় চলচ্চিত্র পর্যন্ত তৈরি হয়। বিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের চলচ্চিত্র ‘দ্য টার্মিনাল’ মেরহান করিমির ঘটনা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এছাড়া ফরাসি চলচ্চিত্র ‘লস্ট ইন ট্রানজিট’ ও ‘ফ্লাইট’ নামের অপেরাটিও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছিল।
নাসেরি ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এ বসবাস করতেন। প্রথম প্রথম বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার মতো কাগজপত্র না থাকায় তিনি বিমানবন্দরে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু এক সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে গেলেও তিনি বাইরে যেতে আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। ফলে দেড় যুগ ধরে তিনি বিমানবন্দরেই থেকে যান।
মেরহান করিমি নাসেরির ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয় ‘দ্য টার্মিনাল’ চলচ্চিত্রটি
বছরের পর বছর তিনি একটি লাল সোফায় থাকতেন, ঘুমাতেন। বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন, কর্মীদের ব্যবহারের ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করতেন। ডায়েরি লিখতেন, ম্যাগাজিন পড়তেন ও ভ্রমণকারীদের জরিপ করতেন। এটাই হয়ে উঠেছিল তার নিত্যদিনের কাজ। বিমানবন্দরের কর্মীরা তাকে লর্ড আলফ্রেড নাম দিয়েছিলেন এবং তিনি ধীরে ধীরে যাত্রীদের মধ্যে একজন মিনি-সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন।
১৯৪৫ সালে ইরানের সোলেমানে জন্মগ্রহণ করা নাসেরি ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডে পড়ার জন্য ইরান ত্যাগ করেন। যখন তিনি ফিরে আসেন, শাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল এবং পাসপোর্ট ছাড়াই বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন। এক পর্যায়ে বেলজিয়ামের ইউএনএইচসিআর তাকে শরণার্থী সার্টিফিকেট দেয়, কিন্তু সে সব কাগজপত্র আবার প্যারিসের একটি ট্রেন স্টেশন থেকে চুরি হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফরাসি পুলিশ পরে তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তার কাছে কোনো অফিসিয়াল নথি না থাকায় তাকে কোথাও ফেরত পাঠাতে পারেনি। এক পর্যায়ে তিনি ১৯৮৮ সালের আগস্টে চার্লস ডি গল বিমাবন্দরে গিয়ে হাজির হন এবং সেখানেই থেকে যান। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ক্রমবর্ধমান কঠোর ইউরোপীয় অভিবাসন আইন তাকে বছরের পর বছর ধরে সেখানেই থাকতে বাধ্য করেছিল।
অবশেষে যখন তিনি শরণার্থীর কাগজপত্র পান, তখন তিনি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ভোগার কারণে ওই কাগজপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। ২০০৬ সালে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত আরও কয়েক বছর সেখানে অবস্থান করেছিলেন। পরে তিনি প্যারিসের একটি ঠিকানায় থাকতেন। বিমানবন্দরে যারা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল, তারা বলেছিল জানালাবিহীন জায়গায় বসবাসের বছরগুলো তার মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি এক চিকিৎসক তাকে জীবাশ্ম বলে বর্ণনা করেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে নাসেরি আবার চার্লস ডি গলে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পুলিশ ও একটি মেডিকেল টিম তাকে চিকিৎসা দেয়, কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.