রোহিঙ্গাদের কান্নায় ঘুম ভাঙ্গে না সুচি-ইউনুসের
- Details
- by যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, 'বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি'। যার বাংলা অর্থ 'অহিংসা পরম ধর্ম'। তিনি আরো বলেছেন, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বৌদ্ধ প্রধান ধর্মের দেশ মিয়ানমার কি ভালো আছে? সেখানকার কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিনিয়ত সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং উগ্রবাদী বুদ্ধদের দ্বারা নানামুখী অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতনে নিষ্পেষিত হচ্ছেন। মিয়ানমারের সেই কান্নার শব্দ ভেসে আসে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের রক্তে লাল হয়ে আছে বাংলার নাফ নদী। তারপরও অত্যাচারিতদের সেই কান্নার ধ্বনি ঘুম ভাঙাতে পারছে না সেখানকার নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সুচির। আমাদের গর্বের ধন ড. মোহাম্মদ ইউনুসও শুনছেন না মিয়ানমারের কান্না অথচ শত শত মাইল দূরের কফি আনান সেই কান্নার রোল শুনেছেন। নির্যাতিতদের জন্য দুটো কথা বলেছেন।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক, রোহিঙ্গা কি? কীভাবেই বা তাদের উদ্ভব? রোহিঙ্গারা হলেন মায়ানমারের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের অধিকাংশের বসবাস পশ্চিম মায়ানমারের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলমান। সর্বশেষ ২০১২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। এছাড়াও বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ মিলে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আছেন। রোহিঙ্গা শব্দটি বা রোহিঙ্গারা কিভাবে এলো? লোকমুখে একটি গল্প শোনা যায়, বিগত সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবতে বসা একটি জাহাজ থেকে কোনমতে প্রাণ পাওয়া লোকজন উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে গেছি। সেই রহমত বা রহম শব্দ থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা শব্দটি।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ‘রোহিঙ্গা’ (রাখাইন) স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া রাজ্যটি দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের জানয়ারি মাসের ৪ তারিখ স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। দেশটিতে শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা। তখনও দেশটির জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ১০ বছর আগে ১৯৬২ সালে মিয়ানমারের তৎকালিন জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। তখন থেকেই রোহিঙ্গাদের অবজ্ঞা করা হয়। সে সময়কার সামরিক জান্তারা রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। লুণ্ঠিত হয় নাগরিক অধিকার। প্রথমে কেড়ে নেওয়া হয় ভোটাধিকার। এরপর ধর্মীয় অত্যাচার, নারীদের হত্যা-ধর্ষণ, সম্পত্তি দখল, বাধ্যতামূলক শ্রমে কাজে লাগানোসহ অমানুষিক নির্যাতনের সূচনা হয় তখন থেকেই। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের শিক্ষিত হবার সুযোগ নেই, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। নেই বিয়ের অনুমতি, সন্তান জন্মদানেও রয়েছে অনেক বিধি-নিষেধ। জাতিসংঘের ভাষ্যমতে রোহিঙ্গারা হলো বিশ্বের সবচাইতে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ১৯৭৮ সাল থেকে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেখানে।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডু এলাকায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ডের তিনটি পোস্টে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেই হামলায় ৯ জন বোর্ডার গার্ডের সদস্য সহ ১৬ জন নিহত হয়। এই ঘটনার পর থেকেই ইতিহাসের ভয়াবহতম অত্যাচার নিপিড়ন চালানো হচ্ছে। দেশটির সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নিপীড়নে এখন পর্যন্ত ৬৯ জন রোহিঙ্গা মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন তবে বেসরকারি হিসাবে সেই সংখ্যাটা কয়েকশত। রাখাইন রাজ্যসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গণমাধ্যমকর্মী, বিদেশী পর্যবেক্ষক, মানবাধিকার কর্মীসহ প্রবেশ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠেছে নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুইয়ের মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয়সহ রোহিঙ্গা মালিকানাধীন ভবনগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের সকল সম্পত্তির মালিকানা নিয়েছে সরকার। রাজ্যে বর্তমানে কোন মুসলমান রোহিঙ্গা নেই। রোহিঙ্গা নির্যাতনের করুণ এ দৃশ্যকে তুলনা করা হচ্ছে ২০০৮ সালে দেশটিতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের সঙ্গে।
সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১৯ বছর বয়সি মোহাম্মদ তৌহিদ নামের এক রোহিঙ্গা তরুণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি’কে টেলিফোনে রাখাইন রাজ্যে কি ঘটছে সে বিষয়ে জানান। তৌহিদ বর্তমানে বাংলাদেশের টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই কিশোর বলেন, আমার চোখের সামনে আমার বোনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি কোনমতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি। আমার মা বাড়িতে একা রয়েছেন। বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছে কিছু জানি না।’ সেনাবাহিনীর নির্মমতা তুলে ধরে ওই যুবক বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উঠেছে ধর্ষণেরও অভিযোগ। বাংলাদেশের টেকনাফস্থ এক রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, সেনাবাহিনী যেসব গ্রামে অভিযানের নামে হামলা চালায় সেখানকার পুরুষরা পালিয়ে যেতে পারলেও নারীরা পারেন না। পরে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন এমনকি সেনাসদস্যরা সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণে লিপ্ত হন।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স মিয়ানমারে গণধর্ষণের শিকার অন্তত ৮ জন নারীর সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। রয়টার্সকে নারীরা বলেছেন, সেনারা তাদের ঘর-বাড়িতে বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। লুট করার পাশাপাশি ধর্ষণ করা হয়েছে নারীদের। ৪০ বছর বয়সের এক রোহিঙ্গা নারী রয়টার্সকে তার নিজের এবং মেয়ের ধর্ষণের কাহিনী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সেনারা অভিযানের সময় আমাকে জোর করে শারীরিক নির্যাতন চালায়। পাশের ঘরেই দলবেঁধে আমার ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে। নারীদের কথায় এভাবেই তাদের ধর্ষিত এবং নির্যাতিত হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে।
যেহেতু আক্রান্ত এলাকাগুলো সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার তাইতো মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, রাখাইন রাজ্যের মংদাউ জেলাস্থ কমপক্ষে ৪৩০টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডাম বলেছেন, স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা ক্ষয়ক্ষতির একটা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি তবে বাস্তব পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
এদিকে বিবিসি বলছে, মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে 'পুশব্যাক' অব্যাহত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় কয়েকশত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হয়েছে। রাখাইন প্রদেশের চার রোহিঙ্গা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, শত শত মানুষ অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে নদী পথে বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের গুলি করে নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা রাখতে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার কথাও বলেছে জাতিসংঘ।
রাখাইন রাজ্যে চলমান নির্যাতন-নির্মমতাকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন-এর সভাপতি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম। তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, গত ৯ অক্টোবর থেকে বিগত প্রায় দেড় মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযানের নামে কমপক্ষে ৩৫০ জন রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করেছে। ধর্ষিত হয়েছেন বহুনারী। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেক গ্রাম।' তিনি দাবি করেন বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন। আর সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা সবচাইতে বেশি উত্তর আরাকান এবং মংডু টাউনশিপে। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা নির্যাতনের এমন লোমহর্ষক ঘটনা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখেও শেষ হবে না। কিন্তু এসব যেন দেখেও দেখা হচ্ছে না। কোন কথা নেই কোথাও। মিয়ানমার যেন অত্যাচারী প্রভাবশালী রাজা, তার অত্যাচার মেনে নিচ্ছে পুরো দেশবাসী। সেই দেশে আছেন একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। অনেকে তাকে গণতন্ত্রের অগ্নিকন্যা নামেও ডাকেন। তিনি অং সান সূচি। বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের সুপ্রিম কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবিধানিক জটিলতার কারণে তিনি সরকার প্রধান হতে পারেননি। কিন্তু তার ইশারাতেই চলছে দেশ। তারপরও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই নারী সুবিধাবঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারেননি। রোহিঙ্গাদের ওপর সরকার ও উগ্রবাদী বৌদ্ধদের নির্মম হামলা আর জুলুমের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি।
বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে কেন চুপচাপ অং সান সুচি। পাখির মতো মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। তা নিয়ে নুন্যতম কোন প্রতিক্রিয়া বা বক্তব্য দিচ্ছেন না সুচি। ১৯৯১ সালে দেশটির সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের জন্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন সুচি। সেই সুচি’র দলই রাষ্ট্র পরিচালনায়। তারপরও মুখে কুলুপ এঁটে আছেন অং সান সুচি। এই সুচির প্রতি এতোটাই ক্ষোভ জমেছে মানুষের যে, তার নোবেল ফিরিয়ে নিতে অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। আর সেই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন লাখো মানুষ। সাধারণত আন্তর্জাতিক বিশ্বে সামগ্রিক শান্তি এবং মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষায় যারা কাজ করে থাকেন তাদেরকেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল পুরস্কার জয়ীরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শান্তির পক্ষে কথা বলবেন এটাই আশা করা হয়। সুচি সেটি করতে ব্যার্থ বলেই তার নোবেল ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে নোবেল বিজয়ী সুচি লাশের গন্ধযুক্ত মিয়ানমারে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছেন।
মিয়ানমারের নিকটতম প্রতিবেশি বাংলাদেশ। আমরা গর্বিত আমাদের দেশেও একজন শান্তিতে নোবেল জয়ী আছেন। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ড: মুহাম্মদ ইউনুস। বিশ্ব শান্তির এই দূত কি পারেন না, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অত্যাচারিত, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দুটো কথা বলতে। ড. ইউনুসেরতো বিশ্বব্যাপী একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনি চাইলেই পারেন বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গাদের পক্ষে একটা জনমত গড়ে তুলতে। রোহিঙ্গাতো আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমস্যা। এখন পর্যন্ত এই নোবেল জয়ীর পা পড়েনি নাসিরনগরের হিন্দুপল্লী কিংবা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল ভুক্তভোগীদের পাশে। তাহলে এই নোবেল দিয়ে আমরা কি করবো? মোহাম্মদ ইউনুসের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায় তিনি এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ভারতে।
মিয়ানমারের অং সান সুচি ও বাংলাদেশের ড. মোহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গাদের লাশের গন্ধে দিব্বি শ্বাস নিলেও লাশের ঘ্রাণে নিজের মানবতাবোধকে দমিয়ে রাখতে পারেননি আরেক নোবেল জয়ী এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। হাজার মাইল দূরে ঘানা থেকে তিনি রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ শুনেছেন। মিয়ানমারে মানবতা লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কফি আনান। তার নেতৃত্বেই সাত সদস্যের একটি কমিশনও গঠিত হয়েছে। এক বিবৃতিতে কফি আনান জানিয়েছেন, সবারই উচিত সহিংসা ত্যাগ করা। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বিভাগকে আমি অনুরোধ করবো আইনের শাসনের প্রতি আনুগত্যশীল থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলছে না বাংলাদেশ সরকারও। উল্টো সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে বাড়ানো হয়েছে বিজিবিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে আশ্রয়ের আশায় বাংলাদেশের দিকে আসা রোহিঙ্গারা মৃত্যুকে কপালে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ সরকার চাইলেই এক সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে। রোহিঙ্গাদের একটা তালিকা করে তাদের উপযুক্ত প্রটেকশন দিয়ে আশ্রয় দেয়া যেতে পারে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুধু বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানই নন তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। শেখ মুজিব যখন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন তখন কেবলমাত্র স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। অনেক কিছুতেই বাংলাদেশ তখন নবীন। তারপরও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় শেখ মুজিব কীভাবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ডমিনেট করে বিভিন্ন বৈঠক করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিনির্মান হচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক কিছুতেই বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। সামরিক খাত, আকাশপথ, নৌপথ সবক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব সাফল্য এনেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে না হোক, অন্তত শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার উচিত মিয়ানমারকে একটু চাপ দেয়া। বাবার মতো নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, রোহিঙ্গাদের পক্ষে দু-চার লাইন বলা। এটা করলেই তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে আরো কয়েকগুণ। এইতো কয়েকদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বলেন। সুষমা স্বরাজ যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরণীন বিষয়ে কথা বলতে পারেন তাহলে মুজিব কন্যা কেন একটা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন না। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিতে পারেন তাহলে সেটা কেবলমাত্র শেখের বেটি শেখ হাসিনাই পারবেন।
লেখক : সাংবাদিক
ইমেইল : This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
আপনি আরো পড়তে পারেন
ধোনীর ধাক্কা আর কুকের ফিতা বেঁধে দেয়া...
ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হওয়ায় বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি
সমস্যা কোথায়, জিপিএ-ফাইভে নাকি পদ্ধতিতে?
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর