যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা চায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির অভিযোগ, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও এ দেশে বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীররা। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাতটি সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সাথে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বৈঠক

গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঐক্য পরিষদের নেতাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে একটি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

লিখিত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিগুলো চরমপন্থী ও জঙ্গিবাদে পরিনত হচ্ছে। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দেয় না, বরং সরকারকে হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, দেশের কোথাও ভাস্কর্য স্থাপন করা হলে তারা তা ভেঙে ফেলবেন। তাদের কাছে ভাস্কর্য আর মূর্তি একই। যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। এমনকি সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীরা একটি ব্লাসফেমি অ্যাক্ট প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছে।

তিনি বলেন, এই আইন প্রণয়ন হলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মের স্বাধীনতা। এছাড়া এটি দেশের জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এতে আরও বলা হয়, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীরা সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, তারা বিভিন্নভাবে বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে হিন্দু মুক্ত হবে বাংলাদেশ। এছাড়া দ্বিতীয় পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবে। তাই দেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ঐক্য পরিষদ। সংখ্যালঘুরা তাদের ওপর হামলার আশঙ্কা করছেন, যা বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে।

এতে আরও বলা হয়, সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নৃশংসতা’বন্ধ করতে তাদের দাবির মুখে একাদশ নির্বাচনের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা সংখ্যালঘুদের জন্য হতাশাজনক।

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশনের কমিশনার স্টিফেন স্নেকের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে ছিলেন কুর্ট ওয়ার্থমুলার, প্যাট্রিক গ্রিনওয়াল্ট ও টম ব্রাউনস। ঐক্য পরিষদ নেতাদের মধ্যে ছিলেন, সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে

১. বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিক ধারা বাতিল ও ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো।

২. সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে বলা।

৩. সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো।

৪. এছাড়াও সাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো। যে প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধে জড়িত অপরাধীদের নাম ও অপরাধের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

৫. একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারকে আহ্বান জানানো।

৬. পৃথক সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানানো।

৭. ভুক্তভোগী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারসহ কথিত নিরাপত্তার জন্য ভুক্তভোগীদের কারাগারে পাঠানো বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানানো।