বিশ্বের 'সবচেয়ে বড়' কোরআন লেখা হলো সাতক্ষীরায়

বাংলাদেশের সাতক্ষীরাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কোরআন। প্রায় সাত বছর ধরে কোরআনের এই কপি তৈরি করেছেন সাতক্ষীরার বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান। দীর্ঘ ৬ বছর ৮ মাস ২৩ দিনে তিনি এটি লিখে শেষ করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন

এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কোরআন দাবি করে হাবিব জানান, ১৪২ পাতা সম্বলিত এই কোরআনের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট। এর আগে ২০২০ সালে দুবাই এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন। সেটির দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ৮ ফুট এবং প্রস্থ ছিল সাড়ে ৬ ফুট।

হাবিবুর রহমানের বাবার নাম মো. আজিজুর রহমান, বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল এলাকায়। তিনি ২০০৩ সালে সাতক্ষীরা শহরের পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০৫ সালে এইচএসসি ও পরবর্তী সময়ে এলএলবি সম্পন্ন করেন। কখনো মাদ্রাসায় না পড়লেও ইউটিউব দেখে আরবিসহ কয়েকটি ভাষা আয়ত্ব করেছেন হাবিবুর রহমান।

কোরআনের কপির নির্ভুলতা পরীক্ষা করছেন আলেমরা

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের দিকে আমি সাতক্ষীরা শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ শুরু করি। সে সময় সমাজের অসহায় অবহেলিত গরীব মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে। তখনই কোনো বিষয়ে বিশ্ব রেকর্ড করার কথা ভাবি, যেন সেটার বদৌলতে মানুষের সেবা করা যায়। পরে সেই চিন্তা থেকে এবং আল্লাহর বাণীকে ভালোবেসে আরবি ভাষাতেই বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কোরআনের প্রতিলিপি তৈরি করবো বলে ঠিক করি।

হাবিবুর আরও বলেন, কখনো মাদ্রাসায় যাওয়া হয়নি। তাই ইউটিউব দেখেই আরবি ভাষা আয়ত্ব করেছি। ধীরে ধীরে কোরআনের দুইটি পারাও মুখস্ত করেছি।

তিনি জানান, ৩ হাজার ৪০৮টি আর্ট পেপার আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে ১৪২টি পাতা তৈরি করা হয়েছে। তারপর তিনি তাতে কোরআনের আয়াতগুলো লেখেন। হাতে লেখা কোরআনের এই প্রতিলিপিটির ওজন দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কেজি। লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙের চারটি কলাম কোরআনের এই কপিটিকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলেছে। সূরা বা পারা কলামের যেখানে শেষ হয়েছে সেই কলামের বাকি অংশে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম। এভাবে এই কোরআনে মধুর এই নামটি লেখা হয়েছে তিন লাখ পঞ্চাশ হাজারবার।

এদিকে তার লেখার পর সেটি পরীক্ষা করে দেখেছেন অভিজ্ঞ আলেমরা। খতিব মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, তার লেখা কোরআন শরিফটির বিভিন্ন অংশ আমি দেখেছি। সেগুলো অতি সুন্দর ও নির্ভুলভাবে লেখা হয়েছে।

হাবিবুরের মা ফিরোজা পারভীন জানান, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারিতে হাবিব লিখতে শুরু করে পবিত্র কোরআন। এই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তার লেখা শেষ হয়। এমন একটি ভাল কাজের বিনিময়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন তিনি।