অপেক্ষা যতই দীর্ঘ সেটার একটা শেষ আছে। এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরুন। যুই যুগ পেরিয়ে গেলেও বিশ্বকাপের মূলপর্বে নেই কোনো জয়ের আনন্দ। শনিবার রাতে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছে ক্যাঙ্গারুর দেশটি। তিউনিশিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া কেবল দীর্ঘদিনের জয়বন্ধ্যত্ব ঘোচায়নি, বাঁচিয়ে রেখেছে নক আউট পর্বের আশা।
১২ বছর পর অস্ট্রেলিয়া, লেভার প্রথম
দলীয়ভাবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য দিনটা ছিল স্বপ্নের। আর ব্যক্তিগতভাবে হিসেব করলে আজকের দিনটা ছিল শুধুই রবার্ট লেভানডফস্কির। বিশ্বকাপে একটা গোলের জন্য কত অপেক্ষাই না করতে হয়েছে। তীর্থের কাক হয়ে অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
সেই অপেক্ষার অবসানের সুযোগ অবশ্য পেয়েছিলেন কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। কিন্তু লেভার দুর্ভাগ্য, পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি। কারণ তিনি যখন স্পট কিক নিচ্ছিলেন তখন গোলপোস্টে নিচে দাঁড়িয়েছিলেন গুলের্মো ওচোয়া নামক একজন অতিমানব। তাকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়!
শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনার পোলিশ স্ট্রাইকারকে গোলবঞ্চিত করলেন মেক্সিকো অধিনায়ক। সেদিন লেভার সর্বাঙ্গে হতাশার ছাপটা পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠেছিল। দুঃস্মৃতির সেই ক্ষতে প্রলেপটা অবশেষে দিতে পারলেন তিনি। তা নিয়েও কত সংশয়। সৌদি আরবের বিপক্ষে গোলমিসের মহড়া দেওয়ার পর।
অবশেষে ম্যাচের ৮২ মিনিটে এসেছে মাহেন্দ্রক্ষণ। দারুণ এক গোলে পোল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করলেন ফিফার প্রাক্তন বর্ষসেরা ফুটবলার। তার দলও সৌদির বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। এই জয়ে নক আউট পর্বের আশাও বাঁচিয়ে রাখল পোলিশরা। এই জয়ের নায়ক লেভা। দলের দুটোর গোলের সঙ্গেই যে জড়িয়ে আছে তার নাম।
প্রথমার্ধে সৌদির বিপক্ষে জেলেনস্কির সৌজন্যে পোল্যান্ড যে লিড নিয়েছিল, সেই গোলের উৎস ছিলেন লেভানডফস্কি। এরপর নিজেই খুঁজে নিলেন জালের ঠিকানা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই তার সেরা রাত। গত বিশ্বকাপের হতাশা কিছুটা হলেও দূর হলো তাতে। আগের আসরে তিন ম্যাচের একটিতেও গোল পাননি তিনি।
লেভার দল লেভানডফস্কিও বিদায় নিয়েছে গ্রুপপর্ব থেকে। এর আগে ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের টিকিট মেলেনি পোল্যান্ডের। ‘ছোট’ দলের বড় তারকার এটাই একটা অস্বস্তির বিষয়। পরপর দুই বিশ্বকাপে দর্শক সারিতে থাকা পোলিশদের রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়েছিলেন লেভা। কিন্তু মূলপর্বে থাকলেন নিস্প্রভ।
অথচ বিশ্বকাপের বাইরে গোলের পর গোল করেছেন লেভানডফস্কি। কিন্তু বড় মঞ্চে এসে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছেন। অবশেষে স্বপ্নের মঞ্চে চেনারূপে দেখা গেল বার্সা তারকাকে। লেভার এই দুরন্ত ফর্ম এখন পোল্যান্ডকে আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তিন যুগ পর ইউরোপিয়ান দলটির সামনে এখন শেষ ষোলোতে ওঠার হাতছানি।
বড় স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়াও। আগের দুইটি বিশ্বকাপে জয় পায়নি তারা। আজ সেই হতাশা কাটিয়ে উঠেছে তাসমান পাড়ের দেশটি। ডিউকের একমাত্র গোলের ওপর দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া হারায় তিউনিশিয়াকে। এই ম্যাচের আগে সবশেষ ২০১০ সালে বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখেছিল তারা। সেটাও প্রায় সাড়ে ১২ বছর আগে; সার্বিয়ার বিপক্ষে, ২-১ গোলে।