আপনি পড়ছেন

বিগত ৩ বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা লেবানিজদের সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশ লেবাননে পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ইউরোপের শক্তিশালী দল জার্মানিও লেবানিজদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। দুর্দশাগ্রস্ত লেবানিজদের সাময়িক স্বস্তি দিচ্ছে এই দুই দলের খেলা।

lebanon football fansঅর্থনৈতিক সংকট ভুলতে খেলায় মেতে আছে লেবানিজরা

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সার্বিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের জয় নিয়ে মেতে উঠেছিল লেবানিজরা। শুক্রবার রাতে ক্যামেরুনের বিপক্ষে মাঠে নামবে সেলেসাওরা। এই ম্যাচ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে লেবাননের ব্রাজিল সমর্থকরা। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আমেরিকার সাথে দেশটির হাজার হাজার পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে লেবানিজ বংশোদ্ভূত ব্রাজিলিয়ানদের সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ১৯ শতকের শেষের দিকে লেবানিজ এবং সিরিয়ানরা ব্রাজিলসহ পুরো ল্যাটিন আমেরিকায় অভিবাসন শুরু করে। সেসময় লেবানন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।

আমিন নামের একজন লেবানিজ দ্য নিউ আরবকে বলেন, 'ব্রাজিল বিশ্বের বৃহত্তম লেবানিজ অভিবাসীদের আবাসস্থল। ফলে বিশ্বকাপে যখন লেবাননের জাতীয় দল নেই, তখন আমরা স্বাভাবিকভাবে ব্রাজিলকেই সমর্থন করব।'

দক্ষিণ আমেরিকায় কাজ করা অনেক লেবানিজ একটা সময় দেশে ফিরে আসেন, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন আচার আচরণের মাধ্যমে ব্রাজিলের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন তারা। যেমন তাদের মধ্যে সবুজ চা এর প্রতি যে জনপ্রিয়তা দেখা যায় তা ব্রাজিলের কারণেই হয়েছে। আমিন বিশ্বাস করেন, ব্রাজিল দলের প্রতি তাদের এই সমর্থন ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যেও অব্যাহত থাকবে।

কানাডা প্রবাসী হুসেন বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে ব্রাজিল সমর্থন করতে দেখেছি, তাই আমি তাদের সমর্থন করে বড় হয়েছি এবং এখনও করি।'

আলি নামের একজন বলেন, 'মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন সমর্থন করে, তেমনি কোনো কিছু না জেনেই ফুটবল দলকেও সমর্থন করে।' তিনি জানান, দেশটির শাসকদের দুর্নীতির ফলে জনগণের মধ্যে যে ব্যাপক হতাশা আছে তার থেকে সাময়িকভাবে দূরে থাকার জন্যই ব্রাজিলের মত বিদেশি একটি দলকে সমর্থন করে থাকে লেবানিজরা।

তবে কেউ কেউ মনে করেন, ব্রাজিল দলের ঈর্ষণীয় সাফল্য, তাদের তারকা ফুটবলার, তাদের খেলার নৈপুণ্যের কারণেই লেবাননে ব্রাজিলের এত জনপ্রিয়তা।

দ্য নিউ আরবের কাছে লেবানিজরা জানিয়েছেন, পেলে, রোনালদো এবং রোনালদিনহোর মতো খেলোয়াড়দের দেখে তারা বড় হয়েছেন। আর বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের জন্য আছেন নেইমার, সিলভা, রিচার্লিসন এবং কাসেমিরোর মত তারকা। আর অতীত এবং বর্তমানের এসব তারকাদের কারণেই লেবাননের মানুষ পাগলের মত ভালোবাসে ব্রাজিল দলকে।

বিশ্বকাপের আরও অনেক শক্তিশালী দল থাকলেও গত শতাব্দীর ৭০ এবং ৮০ এর দশকে যারা বড় হয়েছেন তারা ব্রাজিল এবং জার্মানিকে সমর্থন করেন। এমনকি এখনো এই দুই দলের প্রতি তাদের ভালোবাসা অটুট রয়েছে।

বর্তমানে লেবানন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যাচ্ছে। এর মধ্যেও বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখতে ভুলছেন না তারা। লেবানিজদের দাবি, এখন এত অভাব অনটনের মধ্যে তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে যে ফুটবলকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাদের জীবনে আনন্দ এনে দিচ্ছে। তবে এর মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। জাপানের কাছে ২-১ গোলে জার্মানি পরাজিত হওয়ার পর ব্রাজিলের এক সমর্থককে গুলি করেছে জার্মানির সমর্থক। লেবাননের উত্তরাঞ্চলে ত্রিপোলি শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। 

বাংলাদেশে যেমন আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলকে নিয়ে পাগলামি করে সমর্থকরা। লেবাননেও তেমনি ব্রাজিল এবং জার্মানির রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। এমনকি এই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে দা কুমড়া সম্পর্ক। বিশেষ করে ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে পরাজিত করেছিল জার্মানি। এরপর থেকেই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জার্মান সমর্থকরা মনে প্রাণে চায় ব্রাজিল যেন হেরে যায়, তেমনি ব্রাজিলের সমর্থকরাও জার্মানির পরাজয় কামনা করে। 

লেবানিজদের মধ্যে জার্মানি এবং ব্রাজিল নিয়ে যে শত্রুতা তা আর্কিটেকচারের একজন ছাত্রের কথায় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিনি দ্য নিউ আরবকে বলেন, আমার সাবেক প্রেমিকা জার্মানিকে সমর্থন করত, কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমি ব্রাজিলকে সমর্থন করা শুরু করি।

সূত্র: দ্য নিউ আরব

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.