রোনালদোর দায় মেটালো না ফুটবল
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
ক্লাব ফুটবলে সাফল্যের এমন কোনো চৌকাঠ নেই যা মাড়াননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলেও পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। ‘সিআর সেভেনে’র নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে পর্তুগাল জিতেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। কিন্তু রোনালদোর মতো ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের জন্য মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট-ই কি যথেষ্ট?
অবশ্যই নয়। কারণ ক্যারিয়ার জুড়ে ফুটবলকে তিনি দুহাত ভরে দিয়েছেন। সমর্থকদের উপহার দিয়েছেন উপভোগ্য অসংখ্য রাত। অজস্র রেকর্ড আর ইতিহাসের রাজপুত্র তিনি। হয়তো অকল্পনীয় সৃষ্টিশীলতা ছিল না তার। তবে পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফল হিসেবে তিনি অতুলনীয়। যা তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। অমরত্বের পথে। কিন্তু নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।
৩৭ বছর বয়সী রোনালদো যেন ঠিক তাই। দেড় যুগ ধরে ফুটবল ও সমর্থকদের বিমোহিত করা পর্তুগিজ তারকার একটা অধ্যায় শেষ হলো অপূর্ণ থেকেই। ফেরেঙ্ক পুসকাস, ইউসেবিও, ইয়োহান ক্রুইফদের মতো তার দায়ও মেটাতে পারল না ফুটবল। কারণ ফুটবল যেমন অনিন্দ্য সুন্দর, তেমনি নিষ্ঠুরও বটে।
কাতারে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে এসেছিলেন রোনালদো। স্বপ্ন ছিল শেষটা রাঙানোর। কিন্তু তার শেষের অধ্যায়টা হলো বিবর্ণ। ফর্মহীনতা ও ব্যক্তিগত বিতর্কে আসরজুড়েই থাকলেন আলোচনায়। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, বয়সের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তিনি। বিশ্বকাপের উত্তপ্ত মঞ্চে নিস্তেজ দেখা গেল ‘সিআর সেভেন’কে।
শনিবার রাতে যখন চোখের জল নিয়ে রোনালদো মাঠ ছাড়ছিলেন আবেগ ছুঁয়ে গেল প্রায়সবাইকে। মরক্কো নামক মহাবিস্ময়ে থেমে গেল তার স্বপ্নযাত্রা। আগের চার আসরেও বিশ্বমঞ্চ থেকে শূন্য হাতে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু রোনালদোর এবারের রিক্ততা ছাড়িয়ে গেল সবকিছু। বিশ্বকাপ না জেতাদের কিংবদন্তির তালিকায়ে উঠে গেল তার নামও।
২০০৬ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপে রোনালদো ঠিক রোনালদো হয়ে ওঠেননি। পরের তিনটি আসরেই পর্তুগিজদের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনিই ছিলেন। এই বিশ্বকাপে রোনালদোকে নিয়ে বড় আশা করাটা কঠিনই ছিল। কারণ পর্তুগিজদের এই দলের একাদশে তার উপস্থিতিই তো এক প্রকার কঠিন ছিল। তবু আস্থা রেখেছিলেন প্রধান কোচ ফার্নান্দো সান্টোস। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে শুরুর একাদশেও রেখেছিলেন প্রিয় শিষ্যকে।
কিন্তু নক আউট পর্বে ভিন্ন এক ছবি। যা গত ১৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম। পর্তুগালের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচে রোনালদো থাকলেন ডাগ আউটে। ম্যাচের অধিকাংশ সময় বেঞ্চে বসে দেখলেন দলের খেলা। তার পরিবর্তিত গনসালো রামোসের দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক বুঝিয়ে দিয়েছে সান্টোসের সিদ্ধান্তটা কঠিন হলেও, বাস্তবিক ছিল। মরক্কোর বিপক্ষে রামোস ছিলেন শুরুর একাদশেই, রোনালদোকে নামানো হলো দ্বিতীয়ার্ধে।
কিন্তু ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে আর পর্তুগালের ত্রাণকর্তা হতে পারেননি তিনি। সুযোগ এসেছিল ম্যাচের অন্তিম প্রহরে দলকে সমতায় ফেরানোর। কিন্তু রোনালদোর বুলেট গতির আড়াআড়ি শটটা রুখে দেন মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। দলের আরেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় পেপেও এদিন দেখাতে পারেননি বুড়ো হাড়ের ভেলকি।
অগত্য বিদায় নিতে হলো পর্তুগালকে। বিদায় নিতে হলো রোনালদোকে। এ যাত্রায় রোনালদোর সঙ্গী হলো আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল (১১৮ গোল) প্রাপ্তির কীর্তি। কিন্তু পর্তুগিজ যুবরাজের কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়েও দলীয় সাফল্যটাই বড় ছিল। যেখানে হাহাকারটা থেকেই গেল।
সর্বকালের সেরা ফুটবলার নির্ধারণে বেশির ভাগ সময়ই বিবেচনা করা হয় বিশ্বকাপ। যেটি নির্ভুলও। তবু অনেকে রোনালদোকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে রাখবেন। তা হয়তো রাখা যেতেই পারে। কারণ ফুটবলকে যে অনেককিছুই দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ক্লাব আঙিনায় সর্বকালের অন্যতম সেরা রোনালদোকে আসল উপহারটাই দিলো না ফুটবল।
রোনালদো অবশ্য দেশকে মৌলিক একটা শিরোপা এনে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে পর্তুগিজদের জেতান ইউরোর মুকুট। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ সাফল্য। এই সাফল্য এনে দিতে পারেননি ‘কালো চিতা’ খ্যাত ইউসেবিও, লুইস ফিগোর মতো কিংবদন্তিও। এদিক থেকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবেন রোনালদো।
ফুটবল দলীয় খেলা। দলীয় এসব লড়াইয়ের মাঝেও খণ্ড খণ্ড কিছু দ্বৈরথ ফুটে ওঠে। তবে ফুটবল ইতিহাসে সেরা যে দ্বৈরথটি আছে সেটির এক অংশে রোনালদো। অন্য অংশে আছেন লিওনেল মেসি। কাতারে শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন তিনিও। মেসির আর্জেন্টিনা এখনও টিকে আছে টুর্নামেন্টে। উঠেছে সেমিফাইনালে।
রোনালদোর দায় মেটাতে পারেনি ফুটবল, মেসির দায় মেটাবে তো? ফুটবলকে যে তিনিও অনেককিছু দিয়েছেন। একটা বৈশ্বিক শিরোপার স্বপ্ন যে তারও। রোনালদোর মতো সোনালি ট্রফিটা যে তারও প্রাপ্য। ২০১৪ বিশ্বকাপে তো শিরোপা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে চলে এসেছিলেন মেসি। এবার দূরত্বটা ঘুচবে তো? উত্তরটা মিলবে আগামী সপ্তাহেই।
সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। রোনালদো পাঁচবার। কিন্তু সর্বকালের সেরা ফুটবলারের মানদণ্ড কখনোই ব্যক্তিগত এই খেতাবটি নয়। তাই চাইলেই পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, জিনেদিন জিদানদের কাতারে রাখা যাবে না তাদের। মেসির সামনে অবশ্য এখনও সুযোগ আছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.