বিশ্বকাপ ফাইনাল: পরিসংখ্যানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা

দিনে দিনে কাতার বিশ্বকাপ এখন শেষ প্রহরে। আগামীকাল রোববার রাতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স। দুই দলের জন্যই এবারের ফাইনালটা তৃতীয় শিরোপা জয়ের উপলক্ষ্য। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বল মাঠে গড়ানোর আগে দেখে নেওয়া যাক কী বলছে লড়াইয়ের পরিসংখ্যান:

স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছেন লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে

ফ্রান্সের সঙ্গে সর্বমোট ১২বার দেখা হয়েছে আর্জেন্টিনার। যেখানে তাদের জয় ছয়টিতে। ফ্রান্সের জয় তিনটিতে। বাকি তিনটি ম্যাচ অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে বিশ্বকাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে তিনবার। প্রথম দুবারের দেখায় জিতেছিল আর্জেন্টিনা (১-০ ও ২-১)। গত বিশ্বকাপে শেষ বারের দেখায় নক আউট পর্বের ম্যাচে ফ্রান্স জেতে ৪-৩ গোলে গোলে।

আর্জেন্টিনার সামনে তিন যুগের অপেক্ষা ঘোচানোর সুযোগ। সবশেষ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ট্রফি জিতেছিল ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টরা। তাদের প্রথম সাফল্য এসেছিল ১৯৭৮ সালে।

বিশ্বকাপে এটা হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনার ষষ্ঠ ফাইনাল। এর আগে পাঁচবার ফাইনাল খেলে তিনবারই হেরেছে আর্জেন্টিনা। সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জার্মানির কাছে হারে তারা। এ ছাড়া ১৯৩০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ে, ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে স্বপ্ন জমা দিয়ে আসে ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টরা। সর্বোচ্চ আটটি ফাইনাল খেলেছে জার্মানি। ব্রাজিল খেলেছে সাতবার।

বিশ্বকাপে এটা হতে যাচ্ছে ফ্রান্সের চতুর্থ ফাইনাল। বিস্ময়কর হচ্ছে, গত সাত বিশ্বকাপের চারটিতেই চারটি ফাইনাল খেলেছে তারা। এর মধ্যে ১৯৯৮ ও ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ২০০২ সালে ব্রাজিল এবং ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হেরেছে ফরাসিরা।

দুই দলই দুবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। তাদের এবারের লড়াইটা তৃতীয় তারার জন্য। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। চারবার করে ইতালি ও জার্মানি। আজকের জয়ী দল টুর্নামেন্টের পঞ্চম সেরা দলের খেতাব পাবে।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে পাঁচ গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লিওনেল মেসি। দুজন সমান তিনটি করে অ্যাসিস্টও করেছেন। গোল্ডেন বুট এবং বল দুটোর লড়াইয়েই এগিয়ে আছেন তারা। তাদের পেছনে থাকা আর্জেন্টিনার জুলিয়ান আলভারেজ ও অলিভার জিরার্ডের গোল আছে চারটি করে।

পরপর দুটি বিশ্বকাপ জেতা খেলোয়াড় আছেন কয়েকজন। কিন্তু একই কোচের দুবার বিশ্বকাপে জয়ের নজির নেই। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশামকে ডাকছে বিরল এই কীর্তি। ১৯৯৮ সালে তার অধিনায়কত্বে শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স।

বিরল কীর্তি অপেক্ষা করছে ফ্রান্স অধিনায়ক হুগো লরিসের সামনেও। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টানা দুটি শিরোপা জয়ের হাতছানি তার সামনে।
২০০৬ বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি ও লিওনেল স্কালোনি সতীর্থ হিসেবে খেলছেন। এবারের আসরে গুরু-শিষ্য তারা। আসরের সবচেয়ে কম বয়সী কোচ আর্জেন্টিনার স্কালোনি।

এ নিয়ে তিন বিশ্বকাপের দুটিতেই ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। বিপরীতে ২০০২ সালের পর প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স।

তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি এখন ফ্রান্সের সামনে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে টানা দুটি শিরোপা জেতে ইতালি। ১৯৬২ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার গৌরব দেখায় ব্রাজিল।

এবারের আসরে সৌদি আরবের বিপক্ষে হার দিয়ে মিশন শুরু করে আর্জেন্টিনা। এরপর থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে তারা। ফ্রান্সের মিশন শুরু হয় বড় জয় দিয়ে। টুর্নামেন্টে তাদের একমাত্র হারটি গ্রুপপর্বে; তিউনিশিয়ার বিপক্সে। প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত টাইব্রেকে যেতে হয়নি ফ্রান্সকে। বিপরীতে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা নেদারল্যান্ডস বাধা পাড়ি দিয়েছে পেনাল্টি শ্যুট আউটে।

নক আউট পর্বে আর্জেন্টিনা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়াকে। বিপরীতে ফাইনালে ওঠার পথে ফ্রান্স বিদায় করেছে পোল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও মরক্কোকে।

ইতালির জিওসেফ মিয়াজ্জা, ব্রাজিলের পেলেসহ কয়েকজনই পরপর দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ ফ্রান্স দলের কয়েকজনের সামনে সেই কীর্তি গড়ার হাতছানি।

বিশ্বকাপ এবং কোপা আমেরিকা মিলিয়ে পাঁচটা ফাইনাল খেলেছেন মেসি। এর মধ্যে ফাইনালে হার চারটি। যার একটি বিশ্বকাপে; তিনটি কোপা আমেরিকায়।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর্জেন্টিনার জয় ৪৭টি। ফ্রান্সের জয় ৩৯টি। সর্বমোট ১৮টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স দুবার কম।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ ৪২ ম্যাচের একটিতে হেরেছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে জয় আছে ২৯টি। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৪টি গোল করেছে আর্জেন্টিনা। সেটি ১৯৮৬ আসরে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ১২ গোল করেছেন মেসিরা।

বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচে এমবাপ্পে গোল করেছেন ৯টি। আর ২৫ ম্যাচে মেসির গোল ১১টি। আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই। ফাইনালে গোল করতে পারলে তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে।

ফাইনালে মাঠে নামলেই গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়বেন লরিস। তিনি পেছনে ফেলবেন জার্মানির ম্যানুয়েল ন্যুয়ারকে। দুজনেরই ম্যাচ সংখ্যা এখন সমান ১৯টি।