অভিজাত বাসায় গৃহকর্মীর মুখে স্কচটেপ, হাতে সুপারগ্লু

বনানীর অভিজাত এলাকার একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন ১৭ বছরের তরুণী তানিয়া বেগম। সম্প্রতি তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের সময় তার মুখ স্কচটেপে বাঁধা ছিল, দুই হাত সুপারগ্লু দিয়ে জোড়া লাগানো ছিল, মাথার চুলও ছিল কাটা। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন ছিল। তবে গৃহকর্ত্রী সামিনা আলমের বিরুদ্ধে এ নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

তানিয়া বেগম

গত মঙ্গলবার ওই বাসা থেকে নির্যাতনের চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে '৯৯৯'-এ কল দেন পাশের বাসার বাসিন্দা। পরে দুপুর ২টার দিকে বনানী থানা পুলিশ ২৩ নম্বর সড়কের ৮৪ নম্বর বাড়ির সাততলার ফ্ল্যাট থেকে গৃহকর্মী তানিয়াকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বনানী থানার উপ-পরিদর্শক এজাজুল হক বলেন, ওই গৃহকর্ত্রীর ছোট্ট এক সন্তান রয়েছে। কোনো কারণে ওই সন্তান কাঁদলে গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতন করা হতো। অন্য কোনো অজুহাতে তাকে মারা হতো কিনা, তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।

জানা গেছে, গৃহকর্মীকে উদ্ধারের সময় ওই বাসার গৃহকর্ত্রী, গৃহকর্তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হওয়া হয়। এ ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় রফাদফার মাধ্যমে বিষয়টির মিমাংসা হয়।

নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর বড় বোন নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। ঢাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করি। থাকি গুলশানের কালাচাঁদপুরে। তানিয়া গ্রামে থাকত, মাদ্রাসায় পড়াশুনা করত। মাঝেমাঝে আমার বাসায় বেড়াতে আসত। কিন্তু মাসখানেক আগে রাগ করে গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তানিয়া। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন তানিয়া তার মাকে ফোন করে জানায়, 'চাকরি পেয়েছে। তাকে নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা না করতে।' তখন তার মা বলেছিলেন চাকরি বাদ দিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে আসতে।

নাসিমা আরও বলেন, তবে যে নাম্বার থেকে তানিয়া ফোন দিয়েছিল, সে নাম্বারে ফোন করলে আর ধরত না। পাঁচ দিন আগে বাবার অসুস্থতার কথা জানাতে ওই নাম্বারে আবার ফোন দেওয়া হয়। তখন অপরিচিত একজন নারী ফোন ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন।

নাসিমা বলেন, তানিয়াকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তাকে চেনা যাচ্ছিল না। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাঝে মাঝে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ত। নির্যাতন করে মোবাইলে ছবি তুলে রাখতেন ওই গৃহকর্ত্রী। এও বলতেন, চুল কেটে ফেলে তানিয়াকে সাততলা থেকে ফেলে দিলেও লোকজন ভাববে, তার মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছিল। মারধর করার সময় চিৎকার করলে তালুতে সুপারগ্লু মেখে দুই হাত একসঙ্গে করে দিত। মুখ স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হতো। তানিয়ার মোবাইলেও কিছু ছবি আছে, যা দেখলে গা শিউরে ওঠে।

কিন্তু মামলা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিমা বলেন, বোনের মান-সম্মানের কথা ভেবে মামলা করিনি। থানায় নেওয়ার পর ওই নারীর স্বামী বারবার মাফ চাচ্ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা গরিব মানুষ, মামলা করলে চালাব কীভাবে?, খাওয়ার টাকাই যোগাড় হয় না ঠিক মতো। এখন আবার বোনের চিকিৎসা চলছে। পুলিশের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তারা ৫৭ হাজার টাকা দিয়েছেন। যদিও ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

যদিও টাকা পয়সার বিনিময়ে ঘটনা রফাদফা হওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, 'টাকা-পয়সা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। মেয়েটির ওপর যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাতে মামলা করা উচিত ছিল। ভুক্তভোগীর পরিবার রাজি হচ্ছিল না। পরিচিত কারও ফোন পেয়ে তারা মামলা করা থেকে সরে গেছে।