সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছুটল মেট্রোরেল

সাধারণ যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে চলাচল শুরু করেছে মেট্রোরেল।

সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছুটল মেট্রোরেল

সকাল থেকে দুই স্টেশনেই ছিল যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে। এদের মধ্যে অনেকে অফিসে যাচ্ছেন, অনেকে আবার প্রথম মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে এসেছেন।

এর আগে, ২৮ ডিসেম্বর, বুধবার মেট্রোরেলের একাংশের (উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছোটবোন শেখ রেহানাসহ ট্রেনে চড়েন তিনি। এ সময় তার সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন সস্ত্রীক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এছাড়া আরও ছিলেন হকার, সবজি বিক্রেতা, মসজিদের ইমাম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্য, শ্রমিক, শিশু, শিক্ষার্থী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মোট ২২০ জন।

বৃহস্পতিবার টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে উৎসবের আমেজ। লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনকে সেলফি নিতেও দেখা যায়।

টিকিট কাটছেন এক যাত্রী

আগারগাঁও স্টেশনে ইকবাল হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি উত্তরা যাব। এদিকে মেট্রোরেলও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাই ভাবলাম দেখি যেতে পারি কিনা, তাই এসেছি।

সরকারি চাকরিজীবী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেলে চড়তে এসেছি। আগারগাঁও থেকে উত্তরায় গিয়ে আবার ফিরে আসব। দেশে মেট্রোরেল চালু হয়েছে, এটি খুবই আনন্দের বিষয়।

পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ইফতেখারুল আলম নামে এক যাত্রী, তিনি বলেন, পরিবারকে সাথে নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে এসেছি। উন্নত দেশের মতো এখন আমাদেরও মেট্রোরেল আছে, বিষয়টি গর্বের।

এমআরটি পাস (স্মার্ট কার্ড) পাঞ্চ করে ভেতরে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা

দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে মেট্রোরেল পরিষেবা চালু হলো বাংলাদেশে। ১৯৮৪ সালে ভারতের কলকাতায় চালু হয়েছিল মেট্রোরেল। আর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পাকিস্তানে চালু হয়েছে বছর দুই আগে।

প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, অন্যান্য গণপরিবহনের মতো মেট্রেরেলে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাসের সুবিধা থাকবে না। তবে বিনা খরচে যাতায়াত করতে পারবেন মুক্তিযোদ্ধারা।

তিনি বলেন, যাদের কাছে এমআরটি পাস (স্মার্ট কার্ড) থাকবে তারা মেট্রোরেলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। ৯০ সেন্টিমিটার বা তার কম উচ্চতার শিশুরা বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবে। তবে মেট্রোরেলে পোষাপ্রাণী নিয়ে ওঠা যাবে না।

মেট্রোরেলে উঠতে ইচ্ছুক যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন হয়। এতে প্রকল্পে মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে হয়েছে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মোট প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

এদিকে মেট্রোরেলের পরিচালনা কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, মেট্রোরেলে চড়কে যাত্রীকে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

কিটিক কাটতে কাউন্টারে যাত্রীরা

ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, উত্তরার দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার বা উত্তরা সাউথ স্টেশনে নামতে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকাই গুনতে হবে।

উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।

এছাড়া পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত একই ভাড়া, সেটি হচ্ছে ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত দিতে হবে ৩০ টাকা ভাড়া।

মেট্রোরেলে উঠতে ইচ্ছুক যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন

অন্যদিকে মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট আসতে দিতে হবে ৩০ টাকা এবং কারওয়ান বাজার যেতে দিতে হবে ৪০ টাকা।

এছাড়া মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা লাগবে। তবে মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত যেতে ভাড়া গুনতে হবে ৭০ টাকা।