পেঁয়াজুর দোকানে প্রতিদিন আয় ৭৫ হাজার, কর্মচারীও বানিয়েছেন বাড়ি

৩০ বছর ধরে ভাজাপোড়া বিক্রি করছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মাসুদ খান। এরমধ্যে আছে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ছোলা। তবে এসবের মধ্যে বেশি বিক্রি হয় পেঁয়াজু। পেঁয়াজু বিক্রি করে মাসুদ খান এখন কোটিপতি। শুধু তিনি নন, তার দোকানের কর্মচারীরাও জমি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন।

মাসুদ খান

গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাজারের ফলপট্টিতে মাসুদ খানের দোকানে প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার টাকার ভাজাপোড়া বিক্রি হয়। তার দোকানে কাজ করেন ৩২ জন কারিগর-কর্মচারী। স্থানীয়দের কাছে এটা পেঁয়াজুর দোকান হিসেবেই পরিচিত।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই পেঁয়াজুর দোকানে চলে বেচা বিক্রি। পেঁয়াজু, বেগুনি ও আলুর চপ পাঁচ টাকা করে বিক্রি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, এই বাজারে আরও কয়েকটা ভাজাপোড়ার দোকান আছে। কিন্তু মাসুদের দোকানের মতো ভাজাপোড়া আর কেউ বানাতে পারেন না বা বিক্রিও হয় না। মাসুদের দোকানের ভাজাপোড়া খেতে জেলা-উপজেলার থেকে মানুষ আসে। বিশেষ করে তার পেঁয়াজুর সুনাম সবার মুখে মুখে। এই পেঁয়াজু বিক্রি করে তিনি এখন কোটিপতি। দীর্ঘদিন যেসব কর্মচারী-কারিগর তার দোকানে চাকরি করছেন তারাও জমি কিনেছেন, বাড়ির মালিক হয়েছেন।

সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা বিজয় চন্দ্র সরকার বলেন, মাসুদের পেঁয়াজুর স্বাদ ভালো এবং সবার প্রিয়। তিনি অনেক দিন ধরে এখানে ব্যবসা করছেন, কিন্তু স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা রানী বলেন, সারাবছরই এই দোকানে পেঁয়াজুসহ নানা ধরনের ভাজাপোড়া তৈরি হয়। এই দোকানের খাবারের স্বাদ অন্যান্য দোকানের চেয়ে ভিন্ন।

দোকানের কারিগর দুলাল মিয়া বলেন, আমরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করি। পেঁয়াজুসহ নানা খাবার তৈরি করি। মাস শেষে নিয়মিত বেতনও পেয়ে যাই। এছাড়া রমজান মাসে আমাদের বেতন বাড়িয়ে দেন মালিক। কারণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে আমাদের বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়।

আরেক কারিগর আইয়ুব আলী বলেন,  আমার বেতন ৩০ হাজার টাকা। রমজান মাসে পাই ৪০ হাজার টাকা।

এদিকে মাসুদের দোকানের ম্যানেজার আমির উদ্দিন বলেন, এই চাকরি করে তিনতলা বাড়ি করেছি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখানে আমি প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাই। দোকানে প্রতিদিন ৭০-৭৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। মাঝেমধ্যে আরও বেশি হয়।

জানা গেছে, মাসুদরা ছয় বোন, দুই ভাই। বাবার মৃত্যুর পর মাসহ সবার দায়িত্ব পড়ে মাসুদের ওপর। উপায় না দেখে ১৯৯২ সালে ফুটপাতে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন তিনি। কয়েক মাসের মধ্যে তার পেঁয়াজুর স্বাদের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। কালিয়াকৈর ও আশপাশের মানুষজন পেঁয়াজুর স্বাদ নিতে শুরু করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

মাসুদ খান বলেন, এই ব্যবসা এত দূর পর্যন্ত আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ব্যবসা চালানোর সময় অনেক সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এই ব্যবসা করে বোনদের বিয়ে দিয়েছি। রেস্টুরেন্ট বানিয়েছি, পাকাবাড়ি করেছি। ৩০ বছর আগে দোকানটা ছিল ফুটপাতে। যখন আমার পেয়াজুর কথা ধীরে ধীরে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তখন বাজারের ভেতরে দোকান নিই। কর্মীও বাড়াতে থাকি।