পাগলা মসজিদের কোটি কোটি টাকা যায় কোথায়?

তিন মাস পরপরই খবরের শিরোনাম হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। কারণ নরসুন্দা নদীপাড়ে অবস্থিত এ মসজিদটির দানবাক্সগুলো খোলা হয় তিন মাস পর পর। প্রতিবারেই সেখানে পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা। সর্বশেষ গত শনিবারে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এ হিসাবটি স্বর্ণ-রৌপ্য ও বিদেশি মুদ্রা বাদ দিয়ে। তবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয় কোন খাতে?

পাগলা মসজিদ

জানা গেছে, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত বেশ কয়েকটি খাতে এই টাকা ব্যয় করা হয়। কমিটিতে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩১ জন সদস্য রয়েছেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া।

১৯৭৯ সাল থেকে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পাগলা মসজিদের কার্যক্রম চলে আসছে। সে সময় থেকেই পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসকেরা পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

গোনা হচ্ছে দানের টাকা

প্রথমত, এই টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এ কমপ্লেক্সে থাকা অবস্থিত নুরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ১৩০ জন এতিম ও দুস্থ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা, খাবারসহ আনুষাঙ্গিক সব ব্যয় মেটানো হয়। এ ছাড়া এখানে দায়িত্বরত কর্মীদের বেতনও এ মসজিদের আয় থেকে দেওয়া হয়।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এ মসজিদে প্রাপ্ত দানের টাকা দিয়ে জেলা শহরের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের উন্নয়মূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এ অর্থ থেকে সহায়তা করা হয়।

মসজিদ কমিটি জানায়, মসজিদের পাঁচ একর জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এতে মূল মসজিদটি হবে ছয়তলা বিশিষ্ট , যার প্রতি তলায় একসঙ্গে পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পাশাপাশি পাঁচ হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। এর ফলে এক সাথে প্রায় ৪০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

কমপ্লেক্সে রাখা হবে একাডেমিক ভবন ও অতিথিশালাও। অতিথিশালায় রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। মাদ্রাসা ও লাইব্রেরি থাকবে। থাকবে ১২০ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন মিনার। এ ছাড়া ভবনটিতে স্বয়ংক্রিয় আলোর ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা সব কিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।