প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে পেটালেন আ. লীগ নেতা

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে পিটিয়েছেন রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোকন। পরে আহত প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহত প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বৃহস্পতিবার রাতেই আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামানসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

প্রধান শিক্ষককে মারধর করছেন রোকন, সিসিটিভি ফুটেজ

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। শুক্রবার দুপুরে সিসিটিভি ফুটেজটি প্রকাশ হলে ঘটনাটি সবার সামনে আসে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্যদিকে রোকনুজ্জামান রোকন হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।

কুড়িগ্রাম

মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী জানান, বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন ও স্থানীয় আসাদুল ইসলামের সঙ্গে কিছুদিন ধরে তার বিরোধ চলছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদকে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যান। সেখানে কাজ শেষ হওয়ার পর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গেলে রোকন ও তার লোকজন তাকে স্থানীয় বাস কাউন্টারে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

পরে মোটরসাইকেলে করে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানে উপস্থিত আবু হোরায়রাকে বিস্তারিত জানান। এতে রোকন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সবার সামনেই চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে আবু হোরায়রা উঠে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে অন্যরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

নুরুন্নবী বলেন, আমি এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। আমি এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।

এদিকে, প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে মারধরের কথা স্বীকার করলেও রোকনুজ্জামান রোকন দাবি করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই তিনি তাকে মারধর করেছেন।

তিনি বলেন, নুরুন্নবী ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক না হয়েও জোর করে ওই পদে বসার চেষ্টা করছেন। তাই দলের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা মাস্টারের নির্দেশে আমি নুরুন্নবীকে তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আমি আবু হোরায়রার নির্দেশেই তাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মেরেছি।

এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা জানান, পূর্ববিরোধের জেরে রোকন ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে আমার অফিস রুমে আসেন। কথা বলার সময় রোকন হঠাৎ করেই তাকে চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারেন। এটি করা মোটেও উচিত হয়নি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, রোকন এটি বড় ধরনের অন্যায় করেছেন।

রোকনুজ্জামান রোকন দাবি করেছেন, আপনার নির্দেশে তিনি প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছেন- এ বিষয়ে আবু হোরায়রা বলেন, প্রশ্নই আসে না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। বরং মারধরের পর আমিই রোকনকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছিলাম। এখন নিজের দায় এড়ানোর জন্য আমার ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। আমি নির্দেশ দিয়ে থাকলে রোকন সেটা প্রমাণ করুক।

রোকনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে আবু হোরায়রা বলেন, বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে রৌমারী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী মামলা করতে চাইলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।