ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা

গুজব প্রতিরোধ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার মনিটরিং, জনসন্তুষ্টি অর্জনসহ জেলা প্রশাসকদের ২৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ডিসি সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এ সময় ডিসিদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরি নয়, জনসেবাও করতে হবে। এতে কাজ করে শান্তি পাবেন।

ডিসিদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা পরিবর্তন দেখেছি আপনাদের মধ্যে। আমার বাবাও ক্ষমতায় ছিলেন, দেখেছি। আমি যখন বিরোধীদলে তখনও দেখেছি। ৮১ সালে সারাদেশ ঘুরেছি তখনও দেখেছি। আমি আসার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে জনমুখী মনোভাব এবং মানুষকে সেবার দেওয়ার যে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে এটা প্রশংসনীয়। আমরা তো জনপ্রতিনিধি, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসি। আমাদের মেয়াদ ৫ বছর।

এরপর জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে ২৫ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে-

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মনোযোগ দিতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে নিজেরা এবং জনগণকে সাশ্রয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৩. সাধারণ মানুষ যেন সরকারি অফিসের সেবা নির্বিঘ্নে পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে।

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা বাড়াতে হবে।

৬. গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিই সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে। দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা সবসময় দেখভাল করতে হবে।

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।

১৩. তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয় সে লক্ষ্যে জোর নজরদারি চালাতে হবে।

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। কেউ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজালসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধ ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে।

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে।

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

২৩. নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, প্রচারণা ও বিপণন বাড়াতে করতে হবে।

২৪ জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয় সে লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

২৫. ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্রতী হতে হবে।