ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মাধবদীতে এপাশ-ওপাশ দুলছিল ভবন

নরসিংদীতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে পৃথক ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮০ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ভূমিকম্পের সময় সদর উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সামগ্রী ছিটকে পাশের একতলা বাড়ির ছাদে পড়লে তা ধসে যায়। এই ঘটনায় বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও তার ছেলে মো. ওমর ফারুক (৯) গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে ছেলে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবার মৃত্যু হয়। এছাড়া পলাশ উপজেলায় নাসির উদ্দীন (৬৫) নামে এক ব্যক্তি স্ট্রোক করে মারা যান। একই উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, শিবপুর উপজেলায় গাছের ওপরে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে ফোরকান মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় নরসিংদীর মাধবদীতে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়ায়। সেখানকার ১৪ তলা জে অ্যান্ড জে টাওয়ারের মতো উঁচু ভবনগুলো এপাশ-ওপাশ দুলতে শুরু করলে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির একটি বেসরকারি হাসপাতালের রোগীরাও ঝুঁকি নিয়ে নিচে নেমে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমন ভয়াবহ কম্পন তারা আগে কখনও দেখেননি। শহরের বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।

ভূমিকম্পের কারণে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাবস্টেশনে আগুন লেগে যায়। এতে পলাশ ও ঘোড়াশাল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পের কারণেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল এবং বেলা দুইটার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে। ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের একটি ছয়তলা মাদ্রাসার ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এছাড়া পলাশ উপজেলার দুটি জায়গায় মাটিতে ফাটল দেখা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের কাঁচা রাস্তায় এবং লেবুপাড়ার একটি গরুর খামারের আঙিনায় দীর্ঘ ফাটল সৃষ্টি হয়।

ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকেই মারাত্মকভাবে ভয় পেয়েছিলেন। গরুরহাট এলাকার বাসিন্দা সালমা আক্তার হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। তিনি বলেন, ‘এত ভয় কখনো পাইনি।’ বিরামপুর এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনও জানান, তার জীবনে এমন ভয়ংকর ভূমিকম্প আগে দেখেননি। ভূমিকম্পের সময় অধিকাংশ মানুষই আল্লাহকে স্মরণ করছিলেন বলে জানান তারা।