২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন সিআরপিএফের ৪০ জন জওয়ান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও এর পাল্টা জবাব দেয়। সে সময়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশ পরমাণু যুদ্ধের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে বেঁচে যায়, এমন দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
ভারত-পাকিস্তান
মাইক পম্পেও বলেন, মূলত তাদের কারণেই এই দুই দেশ পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। কারণ তিনি ও তার সহযোগীরা ভারত ও পাকিস্তানকে আলাদা আলাদাভাবে বুঝিয়েছিলেন যে, কোনো দেশই অপরের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে না। নিজের প্রকাশিত সর্বশেষ বই ‘নেভার গিভ অ্যান ইঞ্চি: ফাইটিং ফর দ্য আমেরিকা আই লাভ’ পম্পেও এসব কথা উল্লেখ করেন।
ওই বইয়ে পম্পেও বলেন, ২০১৯ সালের ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন-উত্তর কোরিয়া শীর্ষ সম্মেলনের জন্য তখন আমি হ্যানয়ে অবস্থান করছিলাম। সে সময় যে সংকট তৈরি হয়েছিল, আমি মনে করি না বিশ্ব এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানে। তবে আমরা জানি সে সময় ভারত পাকিস্তানের শত্রুতা পরমাণু যুদ্ধের একেবারে কাছাকাছি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। পরে আমরা সে সময় একই সাথে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সাথে কাজ করি। ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
মাইক পম্পেও
পম্পেও বলেন, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে পড়েছিল যে, গভীর রাতে তাকে ঘুম থেকে তোলা হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তখন কথা বলেন পম্পেও। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টার এবং পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেল সে সময় এ উত্তেজনা দূর করার জন্য কাজ করছিলেন।
তখনকার সময়সূচি থেকে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সঙ্গে একটি বৈঠকের জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিয়েতনামের হ্যানয়ে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় ট্রাম্পের সঙ্গী হিসেবে ছিলেন মাইক পম্পেও।
তিনি বইয়ে আরও লেখেন, ভিয়েতনামের হ্যানয়ে অবস্থানকালীন সেই রাতের কথা আমি কখনোই ভুলতে পারব না। আমরা সে সময় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আলাপ করতে গিয়েছিলাম। বিষয়টি এমনিতেই জটিল। তার ওপর যুক্ত হয় কয়েক দশক ধরে চলে আসা ভারত-পাকিস্তানের পরস্পরকে দেওয়া হুমকি।
পুলওয়ামা হামলা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, পাকিস্তানের বদলা সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তখন পরমাণু যুদ্ধের দিকেই এগোচ্ছিল। তখন ভারত মনে করছিল, পাকিস্তান পারমাণবিক হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই দিল্লিও জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তখন আমি ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। পরে আমি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার সঙ্গে কথা বলি। বাজওয়া দাবি করেন, পাকিস্তান পরমাণু হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে- ভারতের এমন দাবি সঠিক নয়। বরং তিনি দাবি করেন, ভারত পরমাণু হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন জেস্টার ভারতকে বুঝানোর ব্যাপারে দুর্দান্ত কাজ করেন।
ওই রাতের কথা উল্লেখ করে পম্পেও বলেন, একটি ভয়ানক পরিণতি এড়াতে আমরা সেই রাতে যা করেছি তা অন্য কেউ করতে পারেনি। তিনি বলেন, সে সময় ভারতের মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন জেস্টার এবং পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেল আমাদের খুব বেশি সহায়তা করেছিলেন। কারণ তারা সে সময় পরিস্থিতিটি বুঝতে পেরেছিলেন।