খোলাবাজারে বিক্রির ১৩০ কোটি রুপির চাল গায়েব

খোলাবাজারে বিক্রির জন্য কেনা ১৩০ কোটি রুপির চাল গায়েব করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই বাসিল রাজাপাকসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে এ ঘটনা ঘটেছে। ইউনাইটেড রাইস প্রডিউসারস এসোসিয়েশন (ইউআরপিএ) এ অভিযোগ করেছে। খবর দ্য আইল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী ছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে ও বাসিল রাজাপাকসে। মাঝে গোতাবায়া রাজাপাকসে

ইউআরপিএ বলেছে, ২০১৯-২০ সালের মাহা, ২০২০সালের ইয়ালা, ২০২০-২১ সালের মাহা ও ২০২১ সালের ইয়ালা মৌসুমে পোলোনারুয়া, পুত্তালাম ও ত্রিঙ্কোমালি জেলা থেকে সরকারের ক্রয়কৃত ১৩০ কোটি রুপির চালের কোনো হদিস মিলছে না।

শ্রীলঙ্কায় ধান উৎপাদন হয় দুটি বৃষ্টি মৌসুমে। উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফলন মৌসুমকে বলা হয় মাহা। অন্যদিকে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমকে বলা হয় ইয়ালা।

গত ৫ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহকে লেখা এক চিঠিতে ইউআরপিএ সভাপতি ডব্লিউডিকে মুডিথা পেরেরা বলেছেন, তিন জেলার ক্ষুদ্র চালকল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয়ের পর সরকারের ন্যায্যমূল্যের বিক্রয়কেন্দ্র সাথোসার মাধ্যমে দুঃস্থ নাগরিকদের কাছে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কথা ছিল। যদিও আদতে তা হয়নি। কমপক্ষে ৫৮ লাখ কেজি চাল সরকারি গুদাম থেকে আত্মসাত হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা চিঠির অনুলিপি শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের তিনটি নজরদারি কমিটি, মহা হিসাব নিরীক্ষক, দুর্নীতি দমন কমিশনের (সিআইএবিওসি) চেয়ারপারসন, সিআইডির পরিচালক এবং অর্থ, জনপ্রশাসন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন মুডিথা পেরেরা।

তিনি বলেন, পোলোনারুয়া, পুত্তালাম ও ত্রিঙ্কোমালি জেলায় সরকারি চাল ক্রয় কর্মসূচিতে পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ে কর্মকর্তারা সরকারের ক্রয়কৃত চালের একটি অংশ বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে করে সাধারণ নাগরিকরা সহনীয় মূল্যে চাল কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সে সময় সরকার প্রতি কেজি চাল ৫০-৫৫ রুপি দরে সংগ্রহ করেছিল। এখন ওই চাল অনায়াসে ১০০ রুপির কম দামে বিক্রি করা যেত। এমনকি গত বছর খোলাবাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ২৫০-৩০০ রুপিতে ওঠার পরও ডিভিশনাল সেক্রেটারিরা সরকারি গুদামের চাল ছাড় করেনি।

শ্রীলঙ্কার এ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বলেন, সরকারি চাল ক্রয় কর্মসূচিকে ঘিরে এ দুর্নীতির পুরো দায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। তহবিল ছাড়ের পর মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল প্রকল্পের বাস্তবায়নের বিষয়ে নজরদারি করা। কিন্তু তারা তা করেনি। এমনকি ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর বাজেট বক্তৃতার সময় বিরোধী দলীয় হর্ষ ডি সিলভা চাল ক্রয় কর্মসূচিতে দুর্নীতির কথা ওঠালেও মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ করেনি।

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তার ভাই বাসিল রাজাপাকসে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন। চাল ক্রয় কর্মসূচিতে দুর্নীতি এ সময়েই হয়েছে উল্লেখ করে মুডিথা পেরেরা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তারা যা ইচ্ছে তাই করতে দিয়েছে। বড় মিল মালিকরাও এ দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন।