বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন

বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত ওয়াশিংটনে আইএমএফ নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আইএমএফের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

আইএমএফ ও বাংলাদেশ আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সংবাদ সম্মেলন 

আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ বাংলাদেশ ৩৩০ কোটি ডলার পাবে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় গঠিত আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) থেকে বাংলাদেশ পাবে ১৪০ কোটি ডলার। এশিয়ায় আরএসএফ তহবিল থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত প্রথম দেশ হলো বাংলাদেশ।

২.২ শতাংশ সুদে এই ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ। ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে এ অর্থ পাবে বাংলাদেশ। তবে ফেব্রুয়ারিতেই ইসিএফ/ইএফএফ শ্রেণীর ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রক্রিয়া কার্যকর করেছে আইএমএফ। ঋণের অবশিষ্ট অর্থ ছয়টি সমান কিস্তিতে দেওয়া হবে। প্রতি কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ঋণের শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।

গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফকে কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। সে সময় অবশ্য পরিমাণের কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। পরে ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

আইএমএফ ও বাংলাদেশ আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সংবাদ সম্মেলন

এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষে ঢাকা সফরে আসেন। দুই সপ্তাহের সফরে তারা সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। সে সময়ই ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন আইএমএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আঁতোয়াঁ সায়েহ। এরপর বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় উঠল ও অনুমোদন পেল। গতকাল সোমবার  ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঋণ অনুমোদনের জন্য আইএমএফকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, বিশেষ করে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আঁতোয়াঁ সায়েহ এবং মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এ ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ সময় তিনি এ কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

আইএমএফের এই ঋণ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ দুর্বল, তাই আইএমএফ হয়তোবা আমাদের এ ঋণ দেবে না। কিন্তু ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হলো, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।

বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে যে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে তিন ধরনের ঋণ। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। এর মধ্যে ইসিএফ ও ইএফএফ থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। আরএসএফ থেকে পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার।

ঋণ দেওয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি খাতের সংস্কারের শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো আইনের সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার ও কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি করা, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু বিষয়েও শর্তারোপ করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।

করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন ঘটনার জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান হারানো, মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন, আমদানিতে লাগাম টানা, জ্বালানি সংকটের মুখে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানাবিধ কারণে দেশের অর্থনীতি এখন কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে।