সহিংসতার ভয়াবহ চক্রে পাকিস্তান

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে মসজিদ কমপ্লেক্সে হামলায় ১০০ জন নিহত হয়েছে ও বহু লোক আহত হয়েছে। তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও আফগানিস্তানের তালেবান নেতাদের মধ্যে বিরোধ বেড়ে যাওয়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে, এমন খবর চাউর হয়েছে। তবে টিটিপি এ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

পেশোয়ারে হামলায় নিহত মুসল্লিদের সারিবদ্ধ লাশ

গত সোমবার আত্মঘাতী হামলাটি পুলিশ কম্পাউন্ডের ভেতরের মসজিদে ঘটেছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর আছে কি না।

প্রথমে একটি টুইটে টিটিপির একজন কমান্ডার সার্বাকাফ মহমান্দ গত সোমবারের হামলার দায় স্বীকার করেন। হামলাটি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চালানো সবচেয়ে মারাত্মক ছিল। কিন্তু ১০ ঘণ্টারও বেশি পর টিটিপি মুখপাত্র মোহাম্মদ খুরাসানি বলেন, টিটিপি কখনও কোনো মসজিদে হামলা করে না। এটা তাদের নীতিতে নেই। তবে এর আগে একজন কমান্ডার কেন দায় স্বীকার করলেন, তার কোনো জবাব তিনি দেননি।

আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুসল্লিদের ওপর হামলাকে ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানানোর পর টিটিপির তরফ থেকে অস্বীকৃতির খবর এলো। জানা হচ্ছে, টিটিপি ও আফগান তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।

প্রায় এক দশক ধরে টিটিপি পাকিস্তান সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। আফগানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তারা মাথাচাড়া দেয়। তবে টিটিপির সাম্প্রতিক নীতির সঙ্গে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান একমত পোষণ করে না।

তথাকথিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে (ওয়ার অন টেরর) ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সহযোগিতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে টিটিপি। একপর্যায়ে তারা আফগান তালেবানদের সমর্থন পেতে সক্ষম হয়।

টিটিপি ইসলামিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, সরকারি হেফাজতে থাকা সদস্যদের মুক্তি এবং আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার (কেপি) কিছু অংশে পাকিস্তানি সামরিক উপস্থিতি কমাতে চায়। কেপিকে তারা দীর্ঘদিন ধরে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

কাবুলে আফগানিস্তানের তালেবান শাসকদের সঙ্গে আয়োজিত আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরে টিটিপি গত বছরের নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি সৈন্য ও পুলিশের ওপর হামলা বাড়িয়ে দেয়। এর আগে তারা একতরফাভাবে সরকারের সাথে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কেপির রাজধানী পেশোয়ারে সেনাবাহিনী যাতে অভিযান না চালায়, সেজন্য বারবার সতর্ক করে আসছিল টিটিপি।

পেশোয়ারের হামলার পর কেপির দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত সোমবারের বোমা হামলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খান স্বাধীন জিও নিউজ চ্যানেলকে বলেন, আফগান তালেবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের মাটি অন্য দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগী হবে না। প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের সম্মান রাখা উচিত।