সোভিয়েত আমলের দুর্ভিক্ষকে ‘গণহত্যা’ স্বীকৃতি বুলগেরিয়ার

১৯৩০ সালের দিকে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিনের সময় ইউক্রেনে অনাহারে লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষকে বুলগেরিয়া গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে ১৩৪-২৬ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই গণহত্যাকে অস্বীকার করা লাখ লাখ লোককে অবমূল্যায়ন করার সমতূল্য। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সোভিয়েত ইউক্রেনের মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের স্মৃতিস্তম্ভ

১৯৩২-৩৩ সালের দুর্ভিক্ষে দরুণ মৃত্যুগুলোকে এখন থেকে বুলগেরিয়াতে গণহত্যা হিসেবে স্মরণ করা হবে। দেশটি কমিউনিজমের অধীনে মস্কোর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ শনিবার দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

সোভিয়েত সরকারের একটি ইচ্ছাকৃত নীতির কারণে ইউক্রেনে ওই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হয়েছিল। এটিকে হলোডোমোর বলা হয়। দুর্ভিক্ষটি ইউক্রেনের জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে মস্কোর আধুনিক আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা‘ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে।

হলোডোমোর শব্দটি এসেছে হোলোডম থেকে, যার অর্থ অনাহারে হত্যা করা। হলোডোমোর হলো সোভিয়েত ইউক্রেনে ১৯৩২-৩৩ সালে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, যাতে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়র প্রাণ গিয়েছিল। এটি ছিল মূলত বৃহত্তর সোভিয়েত দুর্ভিক্ষের অংশ, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান শস্য উৎপাদনকারী এলাকাগুলোকে প্রভাবিত করেছিল।

যদিও বিশেষজ্ঞরা সর্বজনীনভাবে একমত যে, দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল মানবসৃষ্ট। তবে হলোডোমোর গণহত্যা কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু ইতিহাসবিদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইউক্রেনীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে নির্মূল করার জন্য জোসেফ স্টালিন পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলেন।

ইউক্রেন ছিল তৎকালীন ইউএসএসআর-এর বৃহত্তম শস্য-উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর একটি। ইউএসএসআর-এর বাকি অংশের তুলনায় অযৌক্তিকভাবে ইউক্রেনে উচ্চতর শস্য কোটা ছিল, যা দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে।

২০০৩ সালে জাতিসংঘের একটি যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছিল, ওই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন লোক মারা গেছে। ২০০৬ সাল থেকে হলোডোমোর মানবসৃষ্ট হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। ইউক্রেনসহ ২২টি দেশ মনে করে তা ছিল একটি গণহত্যা।