জেলেনস্কির ক্ষতি না করার আশ্বাস দিয়েছিলেন পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কোনো ক্ষতি না করার আশ্বাস দিয়েছেন। 'আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি জেলেনস্কিকে হত্যা করতে চান?' জবাবে তিনি বলেন, না। এরপর জেলেনস্কিকে ফোন করে জানাই যে, তার জীবনের কোনো হুমকি নেই। জেলেনস্কি তখন বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে একটা ভিডিও রেকর্ড করেন, যাতে বুঝা যায় যে তিনি ভীত নন। 

জেলেনস্কি দেখা করতে চান, এ কথা জানাতেই পুতিনের চেহারা পাল্টে যায়

উপরের কথাগুলো বলেছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেফতালি বেনেট। গত বছর ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পর মার্চে মস্কো সফর করেন তিনি। ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বহুল আলোচিত সেই সফর নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।

বেনেট বলেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এরদোয়ানকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতারা কিছুটা বিশ্বাস করেন। এর বাইরে উভয় পক্ষ বিশ্বাস করে এমন কোনো মধ্যস্থতাকারী ছিল না। এ অবস্থায় আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে মস্কো যাই। জেলেনস্কির অনুরোধেই ওই সফর করি। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র সবাই সফরের পরিকল্পনার কথা জানত। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে সবকিছু করছিলাম।

তিনি বলেন, যুদ্ধের দুই মাস আগে সোচিতে পুতিনের সঙ্গে পাঁচ-ছয় ঘন্টা কথা বলেছি। সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমানের চলাচলের বিষয়ে কিছু প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। ওই বৈঠক শেষে আমি কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে তার সঙ্গে হেঁটেছি। পুতিন অত্যন্ত স্মার্ট ও শার্প লোক।

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর সবাই আশা করছিল আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিব। কিন্তু আমাদের অন্য সংকট আছে। রাশিয়ানরা বোতাম চাপলে সিরিয়ায় আমাদের বিমান ও পাইলট ভূপাতিত হবে। এ অবস্থায় পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে জেলেনস্কির অনুরোধ পেয়ে ভাবলাম, মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিলে আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থানে থাকব।

তিনি বলেন, মার্চের এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আমরা মস্কো পৌঁছি। ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে দারুণ হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক হয়। তিনি অতি অমায়িক ও ভদ্র মানুষ। তবে আমি যখন পুতিনকে জানাই যে জেলেনস্কি তার সঙ্গে দেখা করতে চান, সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা পাল্টে যায়। শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ওরা নাজি, যুদ্ধবাজ, আমি ওর সঙ্গে দেখা করব না।

বেনেট বলতে থাকেন, আমি জেলেনস্কির জীবন নিয়ে উদ্বেগের কথা পুতিনকে জানাই। তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি, আপনি কি জেলেনস্কিকে হত্যা করতে চান? পুতিন জবাব দেন, আমি তাকে মারব না। শুনে আমি বলি, আপনি কি আমাকে কথা দিতে পারেন যে তাকে হত্যা করবেন না? পুতিন তখন আবারও আশ্বস্ত করেন।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কিছুক্ষণ পর মস্কো বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন বেনেট। গাড়িতে বসেই তিনি জেলেনস্কিকে টেলিফোন করেন। জেলেনস্কি তখন অফিস ছেড়ে বাঙ্কারে বসবাস করছিলেন।

বেনেট বলেন, আমি জেলেনস্কিকে ফোনে জানাই যে তার জীবনের ওপর কোনো হুমকি নেই। জেলেনস্কি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি কি শিওর? আমি বললাম, একশ ভাগ শিওর। এর কয়েক ঘন্টা পর জেলেনস্কি বাঙ্কার ছেড়ে নিজের অফিসে ফিরে যান। সেখানে বসে তিনি একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। জেলেনস্কি ভীত নন, এটা বোঝাতে ওই ভিডিও করা হয়।