'ঘণ্টাগুলো তখন বছরের মতো মনে হচ্ছিল'

‘যখন আমি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে ছিলাম, আমার নড়াচড়ার তেমন জায়গা ছিল না, আমার আওয়াজ কেউ শুনছিল না, বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম, তখনকার ঘণ্টাগুলোকে বছরের মতো মনে হচ্ছিল। যেন কত বছর ধরে আমি আটকে রয়েছি ধ্বংসস্তূপের ভেতর।’

উদ্ধারের পর উদ্ধারকর্মীকে জড়িয়ে ধরে কান্না

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিলেন ৫২ বছর বয়সী আন্ডার করিম। ৪৪ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারপর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। খবর মিডলইস্টমনিটর।

আন্ডার করিম বলেন, যখন ভূমিকম্প আঘাত হানছিল, তখন আমি সোফায় বসা ছিলাম। ভূমিকম্প টের পেয়ে আমি বিড়ালের মতো সোফার প্রান্তে কুঁকড়ে গেলাম। আমি আল্লাহকে ডাকতে থাকলাম। হঠাৎ করেই ঘরের একটি পিলার ভেঙে গেল। আমি তখন হাত বাড়িয়ে ছাদের স্পর্শ পেলাম।

উদ্ধারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্ডার করিম

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশের কিরিখান জেলার বাসিন্দা করিম বলেন, এভাবে আমি আটকা পড়ে গেলাম। আমি মাত্র এক বর্গ মিটার জায়গায় চলাফেরা করতে পারতাম। পুরো জায়গাটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি আওয়াজ করার চেষ্টা করেছি, কাউকে ডাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি নিজেই আমার কণ্ঠ শুনতে পাইনি।

তখন ঘণ্টাগুলো আমার কাছে বছরের মতো মনে হলো। এক সময় আমি হাত দিয়েই একটু একটু করে জায়গা পরিষ্কার করে জানালার কাছাকাছি পৌঁছে যাই। সেখানে গিয়ে আওয়াজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটাও কাজে আসেনি।

করিম বলেন, এতক্ষণ যতটুকু নড়াচড়া করছিলাম, দ্বিতীয় ভূমিকম্পের পর নড়াচড়ার জায়গা আরও কমে যায়। সে সময় আমি খুঁজে পাওয়া একটি কাঠের টুকরা দিয়ে অনবরত শব্দ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী, ৪৪ ঘণ্টা পর উদ্ধারকারীরা আমার আওয়াজ শুনতে পায়। পরে তারা আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তিনি জানান, ভূমিকম্পের ওই দিন তিনি বাড়িতে একা ছিলেন, তার পরিবার সেদিন শহরের বাইরে ছিল।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সাত দশমিক আট এবং সাত দশমিক ছয় মাত্রার দুটি ভূমিকম্পের তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় ১০ প্রদেশ বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। একই রকম ক্ষতি হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলেও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশে ২৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তুরস্ক।