মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতার যত কারণ

তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় প্রাণিজ আমিষের উৎস হিসেবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম। এক মাসেরও কম সময়ে তরতর করে বেড়ে গেছে পণ্য দুটির দাম। এর পেছনে মুরগির ফিডের দাম বৃদ্ধি ও করপোরেট খামারিদের প্রভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ব্রয়লারের দাম গত এক মাসে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে ডিমের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। যদিও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম বেড়েছে আরও বেশি।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ৯০-১০০ টাকা ও প্রতি ডজন ডিমের দাম ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১৪৫-১৫০ টাকা। প্রতি ডজন ডিম জানুয়ারিতে ১২০-১২৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।

মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধিতে মাথায় হাত পড়েছে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের। এমনিতেই চড়া মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ সংসারের খরচে নানারকম কাটছাঁট করে চলেছে। এবার মুরগি ও ডিম কেনা কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে বহু পরিবার।

মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে সংশ্লিষ্টরা ফিডের খরচ বৃদ্ধিকেই বড় কারণ মনে করছেন। পোলট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত ভুট্টা, সয়ামিল ও অন্যান্য কাঁচামালের ৭০-৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এম এম খান বলেন, ডলার সংকট, এলসি খোলার জটিলতার কারণে ফিড পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে বাজারে ফিড সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পোলট্রি ফিডের চড়া দামের কারণে লোকসান দিয়ে অনেক ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে মুরগি ও ডিম দুটোরই উৎপাদন এখন কম।

তবে ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার খামার বন্ধ হয়ে যাবার এবং মুরগি ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য করপোরেট খামারিদের আধিপত্যকেই বড় কারণ মনে করছেন।

তিনি বলেন, প্রান্তিক খামার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারেই উৎপাদন খরচের কারণেই বাজার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রান্তিক খামারিকে এক বস্তা ফিড কিনতে করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারির তুলনায় এক হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। একদিনের মুরগির বাচ্চা চুক্তিবদ্ধ খামারিরা প্রতি পিস ৩৫ টাকায় কিনলেও প্রান্তিক খামারিরা ৬০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বেশি দাম দিয়েও প্রান্তিক খামারিরা নিম্নমানের বাচ্চা ও ফিড পাচ্ছে। এ কারণে অনেকে লোকসানের মুখে খামার গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, অনেক অস্তিত্ব রক্ষায় করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এভাবে মুরগি ও ডিমের বাজার করপোরেটদের দখলে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মহসিন বলেন, পোলট্রি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ছোট খামারিরা উৎপাদন খরচ পোষাতে পারছে না। এ কারণে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি বাজারে মুরগি ও ডিম সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। খামারিদের রক্ষা করতে হলে পশুখাদ্য ও উপকরণের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

একই মত প্রকাশ করে সুমন হাওলাদার বলেন, উৎপাদন খরচ ও লাভ হিসাব করলে এক কেজি ব্রয়লারের দাম সর্বোচ্চ ১৮০-১৯০ টাকা হবার কথা। প্রান্তিক খামারিরা বাজারে প্রতিযোগিতায় না থাকায় ডিম ও মুরগির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে ফিডের দাম কমানোসহ সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।