রেমিট্যান্স: সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে ফের বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিট্যান্সের উৎসে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে আমেরিকার চেয়ে চারগুণ বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করে অথচ সৌদি আরবের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ২০ লাখের মতো হবে।

যদিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে আমেরিকার চেয়ে চারগুণ বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে ৯৬৬.৮৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে সৌদি আরবে বাস করা বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ একই সময়ে ১৯.৫ শতাংশ কমে ৯১০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। 

২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ১৬.৫ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৯৯৯.৭৬ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। এক্ষেত্রেও সৌদি আরব দ্বিতীয় আবস্থানে ছিল। তবে এটি উল্লেখ করা দরকার যে সৌদি থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ এই সময়ে ২৩.৪ শতাংশ কমে ৯৯৯.০১ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন

সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অভিবাসীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের আয় অনেক বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন বাংলাদেশির একদিনের আয় সৌদি আরবে কাজ করা একজন বাংলাদেশির এক মাসের বেতনের সমান পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটি বড় অংশের পারিবারিক সংযোগ রয়েছে। এরা তাদের আত্মীয়দের কাছে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন অথবা দেশে বিনিয়োগ করেন।' 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স ছিল ৪.৮২ বিলিয়ন ডলারের প্রায় ২০ শতাংশ।

১৮ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বছরে ০.২২ শতাংশ কমে ৪.৮২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। 

কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের তৃতীয় এবং চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর রয়েছে কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া এবং ওমান।

গত বছরের শেষ তিন মাসে সৌদি আরব ৯৮ হাজার ৭৬৫ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য গিয়েছেন মোট ২ লাখ ৬১ হাজার ১৩৪ জন। সৌদি আরবের পর মালয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।

হুন্ডি দায়ী

তবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান কিছুটা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স কম আসার কারণ হিসেবে তিনি হুন্ডিকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডির ব্যবহার বেড়েছে এবং এটি সাধারণত নির্বাচনের বছরগুলোতে বেড়ে যায়।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ঋণখেলাপি, কর ফাঁকিদাতাসহ দুর্নীতিবাজদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এসব দেশে অর্থ পাচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বেড়েছে। এই দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স কম হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।' 

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ সৌদি আরবে গেছে। কিন্তু রেমিট্যান্সে এর কোনো প্রতিফলন নেই। এর মানে হচ্ছে সিন্ডিকেট এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।' 

মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশে অনেক আইন থাকলেও সেগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। তিনি আশা করছেন, এক্ষেত্রে প্রশাসন যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এতে অর্থ পাচার বন্ধ করা যাবে।

এদিকে বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনানুষ্ঠানিক অর্থ লেনদেন বা হুন্ডির কোনো উপায় নেই, তবে মধ্যপ্রাচ্যে তা ব্যাপকভাবে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেশি হওয়ার এটাই একমাত্র কারণ।