রিকশা ছিনতাইয়ে জড়িত এএসআই!

৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটা ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা কেনেন মোহাম্মদ আলী। ঢাকায় সেই রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। মোহাম্মদ আলী থাকেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে, তার স্ত্রী ও চার সন্তান থাকেন দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে। একার আয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না তাই নিজের কাছে স্ত্রী সন্তানদের এনেও রাখতে পারেন না।

ফাইল ছবি

প্রতিদিন সকালে ও রাতে রিকশা চালান তিনি। অটোরিকশা হওয়ায় মাঝেমধ্যে পুলিশে ধরে, আবার ছেড়েও দেয়। তবে ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আলীকে যে পুলিশ ধরেছে তাতে তিনি চরম বিপদের মুখোমুখি হন। পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী চক্র তার রিকশাটি ছিনিয়ে নেয়।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই দিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে সায়েদাবাদের জনপদ মোড়ে ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি এসে জেরা করা শুরু করেন। বলেন, এখানে কেন রিকশা রেখেছি? আমি বললাম, আমার ভুল হইছে, আমি এখনই চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমাকে যেতে না দিয়ে রিকশায় উঠে বসে। রিকশাটি সায়েদাবাদ রেললাইনের দিকে নিয়ে যেতে বলে। সেখাসে যাওয়ার পর আমাকে ধমক দিতে থাকেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, আমি তখন তার হাতে-পয়ে ধরে রিকশাটা ছেড়ে দিতে বলি। এ সময় তিনি বলেন, ‘রিকশা পুলিশের বড় কর্তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি, তার সঙ্গে কথা বলে আসি। তুমি এখানে দাঁড়াও।’ এ কথা বলে পুলিশের সঙ্গে থাকা আরেক ব্যক্তি রিকশা নিয়ে চলে যান। এরপর ১ ঘণ্টা সময়েও যখন রিকশা ফিরে আসছিল না। তখন দিগ্বিদিক ছুটতে থাকি। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই, কারণ এই রিকশা দিয়েই আমার সংসার চলে। রিকশা চলে গেলে আমার সব শেষ।

এই ঘটনার পর গত মঙ্গলবার গেন্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন মোহাম্মদ আলী। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে একজন হলেন ওমর ফারুক (৩৯)। তিনি লালবাগ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। অপর দুজন হলেন শাইহান (২৮) ও কবির হোসেন (৩৮)। এরমধ্যে শাইহান হলেন ওমর ফারুকের শ্যালক।

গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদ আলীর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সঙ্গে পুলিশের এএসআই ওমর ফারুক জড়িত। তিনিই মূলত অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেন।

ওসি শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওমর ফারুক বলেছেন, গত ডিসেম্বর থেকে তার বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ জন্য তিনি অপরাধে জড়িয়েছেন।

এ বিষয়ে লালবাগ থানার ওসি এম এম মোরশেদ বলেন, প্রায় আট মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এএসআই ওমর ফারুক। তার নামে আরও অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও রিকশা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে ওমর ফারুকের আইনজীবী এস এম জাকির হোসেন বলেন, তার মক্কেল নির্দোষ। পেশাগত বিরোধের জেরে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।