ট্রেনের টিকেটের নতুন নিয়মে কারও স্বস্তি, কারও বিরক্তি

এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ডের মাধ্যমে পূর্বনিবন্ধনের ভিত্তিতে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রির প্রথম দিনে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টিকেট বিক্রিতে কালোবাজারি বন্ধের এ উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই পূর্বনিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জটিল মনে করছেন।

নতুন নিয়মে কালোবাজারি ও টিকেট কেনার ঝক্কি কমবে বলে মনে করছেন অনেক যাত্রী

নতুন নিয়ম চালুর প্রথম দিনে আজ বিপুল সংখ্যক যাত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে স্থাপিত হেলপ ডেস্কে নিবন্ধনের জন্য ভিড় করেন। কেবল একটি হেলপ ডেস্ক থাকায় অনেকে নিবন্ধন সম্পন্ন হতে হতে টিকেট পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন নতুন নিয়মে টিকেট বিক্রি কার্যক্রম দেখতে কমলাপুর এসে বলেছেন, গোড়ার দিকে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রীদেরকে নিজ নিজ এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে, অ্যাপের সাহায্যে অথবা মোবাইল এসএমএস পাঠিয়ে রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমে নিবন্ধিত হতে হবে। বিদেশীরা নিবন্ধনের জন্য পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

কেবল টিকেট কেনা নয়, আন্তঃনগর ট্রেনে ভ্রমণের সময়ও যাত্রীদের এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন কার্ড অথবা পাসপোর্টের মূলকপি অথবা ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। নিবন্ধিত ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে অন্য তিনজনের সঙ্গে তাকেও ভ্রমণের সময় থাকতে হবে।

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট যেহেতু নির্ধারিত ভ্রমণের পাঁচদিন আগেই বিক্রি হয়, তাই নিয়ম অনুযায়ী নতুন নিয়ম পাঁচদিন আগেই প্রবর্তন করা হয়েছিল। তবে অনেকে যেহেতু এ বিষয়ে অবহিত ছিলেন না, তাই আজ সকালে তারা কমলাপুরে রেলওয়ের হেলপ ডেস্কের শরণাপন্ন হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক কারখানা শ্রমিক জানান, বাড়ি ফেরার জন্য তিনি টাঙ্গাইলের টিকেট কিনতে এসেছেন। নতুন নিয়মের কথা তার জানা ছিল না। ভাগ্যক্রমে এনআইডির একটি কপি সঙ্গে থাকায় তিনি নিবন্ধনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে কতক্ষণে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে আর টিকেট কিনতে পারবেন, তা জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আল আমিন নামের আরেক যাত্রী বলেন, আগের নিয়মই ভালো ছিল। এখন ঝামেলা বেড়েছে। কালোবাজারি ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানানো হলে তিনি পাল্টা প্রশ্নে বলেন, এত পুলিশ আর রেলওয়ের এত মানুষ তাহলে কি করছে?

রংপুর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী নতুন নিয়মের প্রশংসা করে বলেন, পূর্বে ভ্রমণের একদিন আগে টিকেট পাওয়া যেত না। নতুন নিয়মের কারণে গতকাল নিবন্ধন করে আজ রেল ভ্রমণ করতে পারছি।

এদিকে আজ থেকে টিকেট চেকিংয়ে পস (পয়েন্ট অব সেলস) মেশিনের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। যাত্রীরা বৈধ কাগজ নিয়ে রেল ভ্রমণ করছেন কিনা, তা চেক করা যাবে এ মেশিনে। বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছে ট্রেনে বসেই টিকেট বিক্রি করা যাবে। রেলমন্ত্রী আজ সকালে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে রেলওয়ে কর্মীদের কাছে ১০০টি পস মেশিন হসস্তান্তর করেন।

নতুন নিয়মের আওতায় আজ থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট ফেরতের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। এতদিন অনলাইনে টিকেট মিললেও তা ফেরত দিতে যাত্রীদের স্টেশনের কাউন্টারে আসতে হতো। এখন থেকে সে ভোগান্তি থাকছে না।