যার হাতে প্রাণ ফিরেছে হাজারো হৃদযন্ত্রে

মৃত্যু পথযাত্রী হাজারো মানুষের হৃদযন্ত্রে সফল অস্ত্রেপচার করেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির। মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংযোজন করে তিনি দেশ এবং দেশের বাইরেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির

ডা. জাহাঙ্গীর কবির প্রথম হার্টের অপারেশন করেন ১৯৯৯ সালে। তখন তিনি চাকরি করতেন হার্ট ফাউন্ডেশনে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। সেই থেকে চলছে তার এই জীবন বাঁচানোর অপারেশন।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মানুষের শরীরে ওই অপারেশন করতে যাওয়া মুহূর্তটা কেমন হয় জানতে চাইলে ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবুও খুব সাবধানে, সচেতন হয়ে এই অপারেশন করতে হয়। কারণ মানুষটাতো জীবিত। অপারেশনের সময় সে হয়ত কিছু টের পাচ্ছে না, অচেতন থাকছে, কিন্তু তার হৃদপিণ্ডতো চলছে।

অপারেশন সফল হলে কেমন লাগে? জানতে চাইলে বলেন, সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এটা বলে প্রকাশ করা যাবে না। জুতসই কোনো বাক্য আমার কাছে নেই, খুব, খুব ভালো লাগে।

দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। এছাড়া নিজের চিকিৎসা জীবনের নানা বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ওপেন হার্ট সার্জারিটা আমিই শুরু করি, বলা যায় আমিই পাইওনিয়ার। এখন সব হাসপাতালে আমার প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা এই অপারেশন করেন। এখন এই রোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকে বিদেশে যেতে হয় না। দেশেই আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে। বলা যায়, ইউনাইটেড হাসপাতাল এ বিষয়ে লিড করছে। আমাকে এখনও প্রতিদিন কমপক্ষে ৮টা অপারেশন করতে হয়। গেল জানুয়ারিতে করেছি ১৭০টা অপারেশন। এই জীবনে কয়েক হাজার অপারেশ করেছি।

অপারেশনের সফলতা কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যর্থতার খবর এখনও পাইনি। আসলে চিকিৎসার চেয়েও আসল বিষয় হলো দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করা। দক্ষ মানুষ তৈরি হলে, সবকিছু সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। দেশও এগিয়ে যায়।

তিনি আরও বললেন, আমরা এই অপারেশনের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সেভ করেছি। এটা প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা হবে। এসব রোগী বিদেশে চলে যেতেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি। দেশেই এখন মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই আমরা অস্ত্রোপচার করছি।

দেশেও এই সাফল্য মূলত ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের। এছাড়া দেশে প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংযোজনের সাফল্যও আসে চিকিৎসকের মাধ্যমে।

সেই অপারেশনের কথা বলতে গিয়ে ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, যে মেয়েটির অপারেশন হয়েছিল, সে এখন তুরস্কে আছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব ভালো আছে।

এই সব সাফল্যে আপনার কেমন অনুভূতি হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্য ভালো। এটা সবারই ভালো লাগবে। একজন রোগীর ভালো-মন্দ আমাদের প্রভাবিত করে। রোগী ভালো থাকলে আমাদের ভালো লাগে, খারাপ থাকলে আমাদেরও খারাপ লাগে। রোগী খারাপ থাকলে আমরা কোথাও গিয়েও শান্তি পাই না। অস্থির লাগে।

পারিবারিক জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ডা. জাহাঙ্গীর কবির। মেয়ে কার্ডিওলজিস্ট, কাজ করছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে। আর ছেলে আছেন নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে।