মিমির ইচ্ছা ছিল পরিবারের হাল ধরবেন

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইউ) থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন আফসানা মিমি (২৫)। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। পড়াশোনা শেষ তাই সার্টিফিকেট তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন মিমি। কিন্তু সার্টিফিকেট নিয়ে ফেরা হলো না তার। মাদারীপুরের শিবচরে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি।

আফসানা মিমি

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ১৯ মার্চ, রোববার পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের পাঁচচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আফসানা মিমিও। রোববার ভোরে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন আফসানা মিমি। পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নিচে পড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন মিমি। 

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়া এলাকার হিরাবাড়ি রোডের মৃত আবু হেনা মোস্তফা নীল সর্দারের মেয়ে মিমি। মিমির বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু মিমি যখন ছোট তখনই তার বাবা মারা যান। মিমিরা দুই বোন, তিনিই বড়। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। তিন বছর আগে তার বিয়েও হয়েছে। তার এক বছর বয়সী একটা মেয়েও আছে। সেই ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে সার্টিফিকেট আনতে গিয়েছিলেন মিমি। কিন্তু আর ফিরে এলেন না। এদিকে মিমিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা কানিজ ফাতেমা (৫৩) । 

মিমির চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট এস আর রহমান জানান, মিমি পরিবারের বড় মেয়ে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দেবে, পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু পরিবারের সব আশা শেষ হয়ে গেল। মেয়েটি সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল। 

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে তারা হলেন-

গোপালগঞ্জের ত্রিনদী রঞ্জন মন্ডল (৫০), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের মাসুদ মিয়া (৩২), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আব্দুল আল মামুন (৪০), গোপালগঞ্জ সদরের হেদায়েত মিয়া (৪৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের সুইটি আক্তার (২০), লোহাগাড়া নড়াইলের ফরহাদ হোসেন (৫০), গোপালগঞ্জ সদরের মোস্তাক শেখ (৪০), গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ার শেখ কবির হোসেন (৫৫), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফসানা মিমি (২৫), গোপালগঞ্জ সদরের সজীব (২৬) এবং ফরিদপুর আলফাডাঙ্গার মোহাম্মদ ইসমাইল। বাকিদের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক।