আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই বাংলাদেশের মানুষের মনে জায়গা করে নেয় স্বাধীনতার অনুভূতি। এদিন থেকেই শুরু হয় বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের যাত্রা। একটি স্বাধীন মানচিত্র গঠনের তীব্র আকুতি তৈরি হয় এ দিনটি থেকেই।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতার যাত্রা

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বশক্তি দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ গড়ার। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশির প্রতি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ঐতিহাসিক ভাষণ- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’-এর মাধ্যমে মুক্তিপাগল সচেতন শ্রেণি পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত লাভ করে। এরপর দুই সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক করার প্রচেষ্টা চলে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তারপর জোর করে বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রণ করার ধারণা থেকে ২৫ মার্চে ইতিহাসের গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সরকার। পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর এবং বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিক ও অফিসাররা তাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পরের দিন থেকে শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অনুসরণে যে যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন চূড়ান্ত সেই যুদ্ধে। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রাম আর বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ পায় লাল-সবুজের পতাকা খচিত একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, পায় নিজেদের একটি মানচিত্র।

দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, মহান স্বাধীনতার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে জাতি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে এগিয়ে যাক- মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব বাংলাদেশিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ লালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পরে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিবসটি উপলক্ষে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি পালন করবে দলটি। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।

অন্যদিকে বিএনপি জানিয়েছে, দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ ছাড়া দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানো হবে।