কতদূর যাবে অগোছালো পাঞ্জাব?

২০১৪ সালের সেই ফাইনালের পর কেটে গেছে ৯ বছর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ওই এক আসরেই ফাইনালে উঠেছিল পাঞ্জাবের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তখন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নামে খেলেছিল তারা। সেবার শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হেরে শিরোপা জেতা হয়নি প্রীতি জিনতার পাঞ্জাবের। এবার কী সেই আক্ষেপ ঘোচাতে পারবে দলটি?

পাঞ্জাব কিংস

এখনকার পাঞ্জাব কিংস তা পারবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে এসেছে জনি বেয়ারস্টোর ইনজুরি। শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ইংলিশ ব্যাটারের ওপেনিংটা মিস করবেন পাঞ্জাব সমর্থকরা।

গলফ কোর্সে গিয়ে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন বেয়ারস্টো। ইনজুরিতে পড়ে মিস করেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজও। আশা ছিল আইপিএলের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হচ্ছে না। আপাতত তাকে বাদ দিয়েই দলের পরিকল্পনা সাজাতে হবে পাঞ্জাবের টিম ম্যানেজমেন্টকে।

আইপিএলের পুরোনো দলগুলোর একটি পাঞ্জাব। কিন্তু প্রায়সব আসরেই মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে থাকে পাঞ্জাব। যত ঘটন-অঘটন সব এই দলের সঙ্গেই হয়। যেমন গত আসরে আইপিএল ইতিহাসের রেকর্ড সর্বোচ্চ দাম দিয়ে স্যাম কারানকে কিনেছিল দলটি। তাদের সেই কাণ্ড সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।

আইপিএলে পাঞ্জাবের পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো নয়। ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা তাদের একবারই হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম আসরের সেমিফাইনালও খেলেছিল তারা। ১৫ বছরের আইপিএল ইতিহাসে পাঞ্জাবের সাফল্য বলতে এটুকুই। এর বাইরে প্রতিবারই গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে প্রীতির মালিকানাধীন ফ্রাঞ্চাইজিটি। আসরে এ পর্যন্ত তিনবার টেবিলের তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে তারা।

বড় তারকা

সাড়ে আঠারো কোটি টাকার স্যাম কারান এই দলের সবচেয়ে বড় তারকা। ব্যাটে বলে সমান পারদর্শী ইংলিশ ক্রিকেটার আছেন দারুণ ফর্মে। সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে অলরাউন্ডিং পারফর্ম করেছেন তিনি।

শক্তিমত্তা

পাঞ্জাবের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারেন দলটির দুই তিনজন অলরাউন্ডার। কারানের সঙ্গে দলে থাকতে পারেন সিকান্দার রাজা অথবা লিভিংস্টোনের মধ্যে যে কোনো একজন। স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি দুজনেই ব্যাট হাতে দলকে জেতানোর সামর্থ্য রাখেন। ফর্ম ও অভিজ্ঞতা বিচারে এগিয়ে থাকবেন জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার রাজা। সম্প্রতি পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) এবং টি-টেনে ভালো ছন্দে ছিলেন তিনি।

জাতীয় দলের হয়েও সবশেষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করেছেন। পাঞ্জাবের পেস আক্রমণও মন্দ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদার সঙ্গে জোট বেঁধে বোলিং করবেন আর্শদ্বীপ সিং। দলে বিকল্প হিসেবে আছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার নাথান এলিস। তাই পেস বিভাগকে যথেষ্ট ভালো মানতে হবে।

দুর্বলতা

জনি বেয়ারস্টোর ইনজুরি একটা শূন্যতা তৈরি করেছে পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপে। তাই ব্যাটিং বিভাগ হতে পারে পাঞ্জাবের দুঃশ্চিন্তার কারণ। টপঅর্ডারে ম্যাথু শর্টকে খেলালে হয়তো জায়গা পাবেন না ভানুকা রাজাপাকসে। মিডল অর্ডারে সেক্ষেত্রে বেশি ভরসা করতে হবে রাজার ওপর। ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটে ঝড় তোলার কাজটা কে করবেন সেখানে আছে দুঃশ্চিন্তা। কারানকে কিনতে অবিশ্বাস্য অংক খরচ করায় দলে ভারসাম্য রাখতে পারেনি তারা।

গত আসরে পাঞ্জাব আট দলের মধ্যে ছয়ে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে। লোকেশ রাহুলকে হারিয়ে তারা নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছিল ধাওয়ানকে। দলটি পুরো মৌসুমে একাধিক পরিবর্তন এনে খেলেছে। যদিও তাতে লাভ হয়নি। অগোছালো আর ছন্নছাড়া পাঞ্জাবের জন্য এবারের আসরটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সেই হতাশা থেকে এবার তারা বের হতে পারবে কি?

পাঞ্জাব কিংস দল

ব্যাটার: শিখর ধাওয়ান, প্রভসিমরান সিং, ভানুকা রাজাপাকসে, মোহাম্মদ শাহরুখ খান, জিতেশ শর্মা (উইকেটরক্ষক), ম্যাথু শর্ট।

অলরাউন্ডার: রাজ বাওয়া, স্যাম কারান, ঋষি ধাওয়ান, লিয়াম লিভিংস্টোন, সিকান্দার রাজা, আথার্ভা টেইড।

বোলার: আর্শদ্বীপ সিং, রাহুল চাহার, বালতেজ সিং, নাথান এলিস, হারপ্রিত ব্রার, হারপ্রিত সিং, বিদ্যুত কাভেরাপ্পা, মোহিত রাঠে, কাগিসো রাবাদা, শিভম সিং।