'জমি বিক্রি করে মাল তুলছিলাম, আমার এখন কি হবে?'

'আমার সব শেষ হয়ে গেল। কিছুই আর থাকল না। গ্রামে জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কয়েকদিন আগে দোকানে মাল তুলছিলাম। আজকে সব পুইড়া শেষ। আমার এখন কি হবে?' কান্নায় ভেঙে পড়ে কথা গুলো বলছিলেন বঙ্গবাজারের ঐশী শাড়ি বিতানের মালিক খালিদ হাসান।

অনেকে চেষ্টা করছেন বেঁচে যাওয়া মালামাল সরিয়ে ফেলতে। বস্তাবন্দি এসব মালামাল তারা রাস্তার পাশে রেখেছেন।

খালিদ হাসান বলেন, 'বঙ্গবাজারে আমার দোকান আছে, সেখানে ৪৮ লাখ টাকার মাল। এর পাশের মার্কেট এনেক্সকো টাওয়ারে আছে শাড়ির গুদাম। সেখানে আছে ৬৭ লাখ টাকার মালামাল। কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। সব পুড়ে গেছে। আমি সাত বছর ধরে ব্যবসা করি। কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জে গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে ঈদ উপলক্ষ্যে দোকানে মালামাল তুলেছিলাম। আমার সব শেষ।'

শুধু খালিদ হাসানই নয়, মঙ্গলবার সকালে লাগা আগুনে শত শত ব্যবসায়ীর স্বপ্ন দাউ দাউ করে জ্বলছে। অনেকে চেষ্টা করছেন বেঁচে যাওয়া মালামাল সরিয়ে ফেলতে। বস্তাবন্দি এসব মালামাল তারা রাস্তার পাশে রেখেছেন।

স্মরণকালের ভয়াবহ আগুন লেগেছে রাজধানীর কাপড়ের বাজার বঙ্গবাজারে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পাশের এনক্সকো ভবনেও। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৫০টি ইউনিট।

দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বঙ্গবাজারের আগুন। বঙ্গবাজার যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আইএসপিআর থেকে বলা হয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল। এছাড়া হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে বিমান বাহিনী।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট। এই মুহূর্তে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করছে। ঘটনাস্থলে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা বলছেন, আগুন নেভাতে যে পরিমাণ পানি দরকার, সে পরিমাণ পানি এই এলাকায় নেই। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আশপাশের ভবনের পানি প্রয়োজন হবে।

আপাতত পুলিশ সদরদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর থেকে ওয়াসা এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর গাড়ি দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যতটুকু সম্ভব দোকানের মালামাল বের করার চেষ্টা করছেন। তারা জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে তারা দোকানে অনেক মালামাল তুলেছেন। এছাড়া ব্যবসায়ের অনেক টাকাও দোকানে ছিল। সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে।