'পুড়েছে ৫ হাজার দোকান, ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা'

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, বঙ্গবাজারসহ আশপাশের মার্কেট মিলে আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকভাবে থোক বরাদ্দ হিসেবে সাতশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন হেলাল উদ্দিন।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন

এ সময় তিনি বলেন, সামনে ঈদ। এই উপলক্ষ্যে সবাই নতুন পণ্য দোকানে তুলেছে। এমন সময় এই অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে।

তিনি বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের পুঁজি হলো দোকানের মালামালই। মালামাল পুড়ে গেলে তাদের কিছুই থাকে না। এখন তাদের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই ক্ষতি পোষাতে প্রাথমিকভাবে সাতশ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হোক।

প্রায় সাত ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাজধানীর কাপড়ের বাজার বঙ্গবাজারে লাগা আগুন। তবে ততক্ষণে পুরো বঙ্গবাজার মার্কেট পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৫০টি ইউনিট। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল পাশের এনক্সকো ভবনেও।

আইএসপিআর থেকে বলা হয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল। এছাড়া হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়েছে বিমান বাহিনী।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে তারা দোকানে অনেক মালামাল তুলেছেন। এছাড়া ব্যবসায়ের অনেক টাকাও দোকানে ছিল। সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে।

বঙ্গবাজারের আদর্শ শপিং কমপ্লেক্সের কুমিল্লা ক্যাপ হাউজের মালিক আলি আহমেদ। তার দোকান ছিল একেবারেই রাস্তার পাশেই। কিন্তু তারপরও কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। চোখের সামনে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার দোকানটি। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকার মালামাল দোকানে তুলেছি। এখন সবই ছাই হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। কিছুই করার ছিল না।

মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, যাদের বাসা মার্কেটের কাছাকাছি তাদের কয়েকজন শুরুর দিকে এসে কিছু কিছু মালামাল সরিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু তা একেবারেই নগণ্য। আমরাও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে ১০ শতাংশ মালামালও বের করা সম্ভব হয়নি।

আরেক দোকানি লাবলু বলেন, আমাদের দোকানের ৬০-৭০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রোজার ঈদে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের বাড়তি কিছু স্বপ্ন থাকে। সে সব স্বপ্ন এবার আগুনে পুড়ে গেছে।

এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী স্বপন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রায় কোটি টাকার মালামাল দোকানে উঠিয়েছিলাম। এখন আমার সব শেষ। তার মতো অনেক ব্যবসায়ী বঙ্গবাজার এলাকায় এখানে সেখানে বসে কাঁদছেন। অনেকের চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। তারা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আকাশ পানে।

মোহাম্মদ সাইমন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সকালে খবর পেয়ে দ্রুত দৌড়ে আসি মার্কেটে। কিন্তু আগুনের তাপের কারণে ভেতরে যেতে পারিনি। আমার দোকানের সব মালামাল পুড়ে গেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা আমার মতো মানুষের জন্য কঠিন হবে।

এক ব্যবসায়ী জানান, পুড়ে যাওয়া মার্কেটে আমার তিনটা দোকান ছিল। ৪০ লাখ টাকার মাল ছিল। এখন সব শেষ। ভাই, আমি এখন কাঁদতেও ভুলে গেছি।

ঈদকে সামনে রেখে লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। ঈদের জন্য কাপড়ের নতুন নতুন কালেকশন মজুদ করেছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভালো ব্যবসার। আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় এখন তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। দিশেহারা এসব ব্যবসায়ী এখন কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।