একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দিলো আইএজিএস

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস)। সংস্থাটি ‘রেজুলেশন টু ডিক্লেয়ার ক্রাইমস কমিটেড ডিউরিং দ্য নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ান বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার জেনোসাইড, ক্রাইমস অ্যাগেইন্সড হিউম্যানিটি অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইমস’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ গণহত্যার স্বীকৃতি দিল আইএজিএস

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যার সময় সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আইএজিএস রেজুলেশন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আইএজিএসের গৃহীত এ রেজুলেশন বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যথাযথ স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

একটি বৈশ্বিক আন্তঃবিভাগীয়, নির্দলীয় সংস্থা হিসেবে আইএজিএস ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি গণহত্যার প্রকৃতি, কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে গবেষণা করে এবং গণহত্যা প্রতিরোধে নীতিগত অধ্যয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আইএজিএস এখন পর্যন্ত বেশকিছু আনুষ্ঠানিক রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। এছাড়া সংস্থাটি নিয়মিতভাবে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন করে এবং ‘জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশন’ নামে জার্নালসহ প্রকাশ করে।

১৯৭১-এ পাকিস্তানিদের গণহত্যার শিকার হয় বাঙালিরা

আইএজিএসে সদস্য ও প্রস্তাবের প্রস্তাবক তৌহীদ রেজা নূর জানান, বর্তমানে আইএজিএসের সদস্য ৬২৬ জন। এর মধ্যে ২১৮ জন ভোটদাতা সদস্যের মধ্যে ২০৮ জনই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে চার সদস্য। অন্যদিকে আটজন সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। সবমিলিয়ে এই প্রস্তাব নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয়েছে।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহীদ রেজা নূর মনে করেন, জেনোসাইড বিশেষজ্ঞদের ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাব শহীদদের আত্মদানের স্বীকৃতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে আইএজিএসে একাত্তরের জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। সে সময় এ প্রস্তাবের সমর্থনকারী ছিলেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টনসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

আইএজিএসের একটি নিয়মের কারণে প্রথম দফায় প্রস্তাবটি পাস হয়নি। তবে পরে ওই নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়। পরে আবারও প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলে টানা এক মাস ভোটাভুটি শেষে গত রোববার বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করে প্রস্তাবটি পাস হয়। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়।

বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিতে একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নেমেছিল বাঙালি নিধনে। পরবর্তী নয় মাসে তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। তবে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পরপরই বাঙালি যে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় একটি স্বাধীন মানচিত্র, সোনার বাংলাদেশ।