মানবিক পুলিশ ইউনিটের সেই শওকতকে চাকরিচ্যুত

মানবিক পুলিশ ইউনিটের সেই কনস্টেবল শওকত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা।

পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেন

আদেশে বলা হয়েছে, ‘কনস্টেবল শওকত হোসেন ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন, যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তার পক্ষে চাকরি করা সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’

কনস্টেবল শওকত হোসেনের চাকরিচ্যুত আদেশের মধ্য দিয়ে মূলত সিএমপির মানবিক পুলিশ ইউনিট বন্ধ হয়ে গেল। কারণ তিনিই ছিলেন মানবিক পুলিশিংয়ের মূল ব্যক্তি। ২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। তার এমন কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

মানবিক সহায়তা দেওয়ায় পুলিশের এই ইউনিটটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানা এলাকায় একটি মাহফিলে অতিথি হয়ে যান শওকত এবং সেখানে তিনি ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ উঠে। এরপর তাকে দামপাড়া পুলিশ হাসপাতাল থেকে বদলি করে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হয়।

জানা গেছে, কর্ণফুলী থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়েন কনস্টেবল শওকত। পরে তাকে দামপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তিনি ৮ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন। এরপর এক সপ্তাহের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন। কিন্তু ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭১ দিন তিনি থানায় অনুপস্থিত ছিলেন। ২১ জানুয়ারি তিনি অনুপস্থিত থাকার কারণসহ থানায় হাজির হন।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। সেই মামলার তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবাব দেন শওকত হোসেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বেওয়ারিশ মানুষদের নিয়া মানবিক কার্যক্রমের সহিত সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবলস পদে চাকরি করা সম্ভব নয়।’

শওকত হোসেনের এমন বক্তব্যের পর ১৬ এপ্রিল সিএমপির উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন।

শাকিলা সোলতানা বলেন, শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছিল। সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে শওকত বক্তব্য দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।