আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং, চট্টগ্রামে প্রস্তুত ২৮৪ মেডিকেল টিম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সকল সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের উত্তর-উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২৮৪ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও সাইক্লোন প্রস্তুতি সেলের ফোকাল পারসন হুসেইন মুহাম্মদ বলেন, মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলায় মোট ১ হাজার ১৭০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মোট ১৬ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক সচেতনতামূলক প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তারা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ করছেন। এছাড়া, পর্যাপ্ত চাল, শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, তারা কোনো সচেতনতামূলক প্রচারণা দেখেননি।

সন্দ্বীপ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু বলেন, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, জেলার ১৫টি উপজেলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং বন্দর নগরীর ৯টি আরবান ডিসপেনসারি চিকিৎসা দিতে  প্রস্তুত আছে।

১২ মে, শুক্রবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত আবহাওয়ার ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এটি ১২ মে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের উত্তর-উপকূলে আঘাত হানতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে মোখা শক্তি হারাবে।

ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের আবহাওয়া পূর্বাভাসের বরাতে ১২ মে, শুক্রবার কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটার এর বেশি থাকতে পারে।

যদিও এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) রূপ নিতে পারে। তবে এর পরের স্টেজে অর্থ্যাৎ সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ সকাল ৯টায় যে জায়গায় অবস্থান সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের আশপাশে সমুদ্রে ২৮ ফুট উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত করলেও বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আজ রাত থেকেই বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস এর উচ্চতা বৃদ্ধি হওয়া শুরু করবে। আগামীকাল সকাল থেকেই বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাব অনুভব করা শুরু করবে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

শনিবার দুপুরের মধ্যে কক্সবাজার জেলার সকল দ্বীপ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন এই আবহাওয়া গবেষক।

এছাড়া এই ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য বৃষ্টি, বন্যা থেকে শুরু করে পাহাড় ধসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।