ভারতের দেনা রুপিতে পরিশোধের অনুমতি চেয়েছে বিপিসি

ডলার সংকটের কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। জ্বালানি সরবরাহকারক কোম্পানিগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) দেনার পরিমাণ ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি ক্রয় বাবদ ভারতের কাছে বকেয়া দেনা রুপিতে পরিশোধে সরকারের অনুমতি চেয়েছে বিপিসি। খবর রয়টার্স।

জ্বালানি বাবদ ভারতের পাওনা রুপিতে পরিশোধের সুযোগ চায় বিপিসি

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমেছে। গত ১৭ মে নাগাদ দেশের রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ১৮ কোটি) ডলারে, যা সাত বছরে সর্বনিম্ন।

জ্বালানি আমদানির ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুত ঘাটতি ও লোডশেডিংয়ে ভুগছে। এতে করে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত ও অন্যান্য শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে সব ধরনের জ্বালানি আমদানি ও বিপননকারী কর্তৃপক্ষ বিপিসির কয়েকটি চিঠি থেকে জানা যায়, সংস্থাটির কাছে বিদেশি সরবরাহকারকদের ৩০ কোটি ডলারের বেশি পাওনা দাঁড়িয়েছে। এতে করে জ্বালানি মজুত উদ্বেগজনকভাবে কমতে শুরু করেছে।

গত ৯ মে বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের কাছে বিপিসির পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা/ডলারের সংকটের কারণে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যথাসময়ে আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না।

জ্বালানি বাবদ ভারতের পাওনা রুপিতে পরিশোধের সুযোগ চায় বিপিসি

এর আগে এপ্রিলে সংস্থাটির এক চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, মে মাসের জন্য প্রস্তুতকৃত আমদানি শিডিউল অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করতে না পারলে সারাদেশে সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে, যার ফলে জ্বালানি মজুত উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পাবে।

এ বিষয়ে বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মন্তব্য জানতে চেয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রতি মাসে বিপিসি পাঁচ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও এক লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। গত মাসে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বিপিসি জানিয়েছে, বিদেশী সরবরাহকারকদের কেউ কেউ শিডিউলের চেয়ে কম জ্বালানির চালান পাঠিয়েছে। কোনো কোনো সরবরাহকারক হুমকি দিয়েছে সরবরাহ বন্ধের।

বিপিসির পাওনাদারদের মধ্যে রয়েছে ইউনিপেক (চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি সাইনোপেকের ট্রেডিং শাখা), ভিটল (সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ডাচ জ্বালানি ট্রেডিং কোম্পানি), এনক (আমিরাত ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি), ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), পেট্রোচায়না (চীন) ও বিএসপি (ইন্দোনেশিয়া)।

বিপিসির একটি সূত্র পরিচয় প্রকাশ না শর্তে রয়টার্সকে বলেছে, কয়েকটি কোম্পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। অন্যান্যরা আমদানি পরিকল্পনার তুলনায় কম সংখ্যক চালান পাঠাচ্ছে।

মে মাসের চিঠিতে দেখা যায়, বিপিসিকে চলতি বছর ডিজেলের জন্য ভারতের নুমিলাগড় রিফাইনারি লিমিটেডকে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে। একইভাবে ডিজেল ও জেট ফুয়েলের মূল্য বাবদ ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে ১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে।

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রাপ্য বকেয়া বিল রুপিতে পরিশোধের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অনুমতি দিতে বিপিসি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

এর আগে সেপ্টেম্বরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রিজার্ভ কমতে থাকায় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ভারতের রপ্তানিকারকদের পরামর্শ দিয়েছে যাতে তারা ডলার ও অন্যান্য প্রধান মুদ্রায় বাংলাদেশি পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের চুক্তি পরিহার করে। এর পরিবর্তে টাকা ও রুপিতে লেনদেনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের ৪১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের অর্থনীতি বহু বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ও চলতি হিসাব ঘাটতি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

জানুয়ারি মাসে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানও চলতি বছর আইএমএফের তহবিল পেয়েছে অথবা চেয়েছে।