মরুভূমিতেও গমের বাম্পার ফলন, নেপথ্যে কূপ

আমিন সালাহ ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গম চাষ করতেন। কিন্তু ক্রমাগত খরার কারণে তিনি নাজাফের মরুভূমিতে চাষাবাদ করতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে মরুভূমিতে কূপ খনন করে জমিতে সেচের পানি দিতে হচ্ছে তাকে। এবার দ্বিগুণেরও বেশি ফসল ফলাতে পেরেছেন তিনি।

ইরাকে গমের বাম্পার ফলন

এই পদ্ধতিতে মরুভূমিতে ১০০ মিটারের বেশি গভীর কূপ খনন করে স্প্রিংকলার সিস্টেমের মাধ্যমে জমিতে বৃষ্টির মতো পানি ছিটিয়ে সেচ দিতে হয়। নদীর পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার প্রাচীন পদ্ধতির তুলনায় স্প্রিংকলার সিস্টেমের মাধ্যমে জমিতে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন করা যায় বলে জানিয়েছেন আমিন সালাহ।

ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাক এবং সানগ্লাস পরা আমিন সালাহ নিজের ফসলের জমির পাশে হাঁটছিলেন। আনন্দে উচ্ছ্বসিত ইরাকি এই কৃষক বলেছেন, ‘এটি একটি সোনালী ফসলের বছর, একটি সোনালী মৌসুম।' তিনি স্প্রিংকলার সিস্টেমের সুবিধাগুলো বর্ণনা করছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই পদ্ধতিতে কম অর্থ খরচ হয়, পানিও কম লাগে এবং মানসম্পন্ন ভাল ফসল পাওয়া যায়।

ইরাক সরকার বলেছে, সরকার অনুমোদিত এই পদ্ধতির মাধ্যমে চলতি বছর গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে গম চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বছর ৮ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন ইরাকি কৃষকরা, যা গত বছর ছিল ৪ লাখ হেক্টর।

ইরাকের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-খুজাই বলেছেন, এবার প্রায় ৪০ লাখ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি ইরাকের ৪ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ করবে। ইরাকিদের প্রধান খাদ্য রুটি। প্রায় প্রতিটি খাবারের সঙ্গেই তারা রুটি খেয়ে থাকেন।

ইরাকে গমের বাম্পার ফলন

টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস ইরাকের প্রধান দুটি নদী। হাজার হাজার বছর আগে এই নদীর তীরেই মেসোপটেমিয়া সভ্যতার উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, পানির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং উজানের বাঁধের কারণে নদীর পানির প্রবাহ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।

তবে পানির জন্য মরুভূমিতে কূপ খনন ইরাকিদের হয়ত সাময়িক স্বস্তি প্রদান করবে। কূপগুলোর ব্যাপক ব্যবহার মরুভূমির জলাশয়গুলোকে শুষ্ক করে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদরা। 

প্রতিবেশী সৌদি আরব ২০০৯ সালে মরুভূমির কূপগুলোর ওপর নির্ভর করে একটি ৩০ বছরের গম উৎপাদন কর্মসূচি বাতিল করেছিল। এই কর্মসূচির ফলে তারা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল কিন্তু এটি দেশটির দুষ্প্রাপ্য পানি সরবরাহকে হ্রাস করেছিল।   

এদিকে নাজাফের কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক কৃষি প্রকৌশলী করিম বিলাল জানিয়েছেন, ইরাকে ১১ লাখ ১০ হাজারের বেশি কূপ রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১০ হাজার কূপে আধুনিক স্প্রিংকলার সিস্টেম লাগানো রয়েছে, যা পানির অপচয় রোধ করে।  

ইরাকের কৃষি নিয়ে গবেষণা করেছেন হাদি ফাতাল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘ইরাকের উচিত কৃষির আধুনিকীকরণের দিকে মনোনিবেশ করা, নদীর প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে জল কূটনীতিতে নিযুক্ত হওয়া এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি অঞ্চলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা।'  

খরার কারণে ২০২১ এবং ২০২২ সালে ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারেননি ইরাকি কৃষকরা। এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে ইরাক। দেশটিতে ইতোমধ্যেই জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট স্থানান্তর শুরু হয়েছে। 

সূত্র: রয়টার্স