ইমরান খান: সেনাবাহিনী তার দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবার প্রকাশ্যে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক দলকে ধ্বংসের চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন। ৩ জুন, শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি দেশটির শক্তিশালী দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনলেন।

ইমরান খান

এর আগে ইমরান খান তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই- ইনসাফের (পিটিআই) কর্মীদের দমন-পীড়নের জন্য সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে শনিবার রাতে লাহোরে নিজ বাড়িতে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সরাসরি সেনাবাহিনীকে দায়ী করে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'এটা সম্পূর্ণভাবেই এস্টাবলিশমেন্টের কাজ। এস্টাবলিসমেন্ট মানে অবশ্যই সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট। কারণ তারা এখন খোলাখুলিভাবেই এটা করছে। আমি বলতে চাচ্ছি, এটা এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়।' 

এদিকে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রকে এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলে তিনি সাড়া দেননি। পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দেশটি শাসন করেছে সামরিক বাহিনী। এর আগে কেউ সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সাহস করেননি। তবে এবার সে কাজটিই করছেন ইমরান খান। ফলে শক্তিশালী এই বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 

৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পিটিআই কর্মী এবং সমর্থকরা সামরিক ভবন এবং সম্পত্তি ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে ইমরান খানের শত শত কর্মী সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

বিক্ষোভে জড়িত থাকার সন্দেহে সামরিক আদালতে ইমরান খানের দলের সদস্যসহ কয়েক ডজন লোকের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। সাধারণত সামরিক বাহিনীর সদস্য অথবা রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হয়, তাদেরই কেবলমাত্র সামরিক আদালতে বিচার করা হয়।     

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনীর ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)  তার দলের কর্মীদের দমন-পীড়নের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিল।   

তিনি উল্লেখ করেন, তার দলের দুই সিনিয়র সদস্যকে আইএসআই আলোচনার জন্য ডেকেছিল। যখন তারা সেখানে যান, তখন তাদের পিটিআই থেকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়।  

বর্তমানে জামিনে মুক্ত ইমরান খানের আশংকা তাকেও সামরিক আদালতে বিচার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। এর ফলে তিনি চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।   

তিনি বলেছেন, 'আমার বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০ টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এগুলো অযৌক্তিক সব মামলা। যে কোনও বেসামরিক আদালতে এগুলো বাতিল হয়ে যাবে।' 

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারে স্বচ্ছতার অভাব, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় এবং অন্যায় বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। 

ইমরান খান জানান, তিনি বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।  তিনি জানেন না কেন সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির তাকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। 

সূত্র: রয়টার্স