ডলার সংকটে ব্যাহত সীমান্ত বাণিজ্য

ডলার সংকটের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নথিতে এ তথ্য জানা গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে সীমান্তে বাণিজ্য সংক্রান্ত লেনদেন আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির দিকে ঝুঁকতে পারে বলেও দূতাবাস আশঙ্কা করছে।

টেকনাফ বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হিসেবে শ্রেণীকরণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস

বাংলাদেশ দূতাবাসের নথিতে বলা হয়েছে, ডলার সংকটের কারণে সীমান্ত বাণিজ্য নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে মিয়ানমার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য নিতে পারছেন না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিয়ানমার বাংলাদেশে এক হাজার টনের বেশি রুই মাছ রপ্তানি করেছে। মার্চ নাগাদ মিয়ানমার থেকে রুই মাছ রপ্তানি ২০০ টনের কাছে নেমে এসেছে। ডলার সংকটের কারণে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে না পারায় এ অবস্থা হয়েছে।

সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির স্বার্থে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফ বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দরে উন্নীতকরণ এবং বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তিতে দুই দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

দূতাবাসের তথ্য মতে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্যে অর্থ স্থানান্তরে ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক। এরইমধ্যে ব্যাংকটি ডলার সংকটের কথা জানিয়েছে এবং মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডলার দেওয়া বন্ধ করেছে। একইভাবে, অগ্রণী ব্যাংক সফটওয়্যার সংকটের কথা উল্লেখ করে তহবিল ছাড়করণ সীমিত করেছে।

ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটস (এফডিডি) ইস্যুর বাধ্যবাধকতার কারণে বিশেষত টেকনাফ ও সিত্তোয়ে সীমান্ত পয়েন্টে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। শর্ত অনুযায়ী কেবলমাত্র সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখা এফডিডি ইস্যু করবে। এতে করে ওই শাখার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে দূতাবাস উল্লেখ করেছে।

এফডিডি ইস্যুটি কয়েকটি সূত্র থেকে দুর্নীতির নিশ্চিত অভিযোগ আসার কারণে আরও জটিল হয়েছে। ব্যাংক ড্রাফট ইস্যুর জন্য সোনালী ব্যাংকের শাখাটি বাড়তি ফি আদায় করে থাকে। এতে করে ওই শাখার ওপর চার বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে দূতাবাস অভিযোগ করেছে।

মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধার্থে টেকনাফ বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর ঘোষণার এবং ওই বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হিসেবে শ্রেণিকরণের সুপারিশ করেছে। টেকনাফ বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত লেনদেন ও প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপযোগী বিধিবিধান ও সুবিধার আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণের স্বার্থে বাংলাদেশ দূতাবাস দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে লেনদেন ও বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ ও জোরদার হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নথিতে বলা হয়, সিত্তোয়ে বন্দরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাতে মিয়ানমারের কোনো সমস্যা হয় না। এ অবস্থায় টেকনাফ বন্দরের মাধ্যমে পণ্য চলাচলকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হিসেবে গণ্য করলে প্রক্রিয়াটিতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই পক্ষের ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্য পরিচালনা সহজ ও সরল হবে। এতে করে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে এফডিডি সংগ্রহ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে লেনদেন হওয়া পণ্য তালিকায় রয়েছে বাঁশ, আদা, চীনা বাদাম, কাঁকড়া, মাছ, কম্বল, ক্যান্ডি, আচার, জুতা, হিমায়িত খাদ্য, বরই, রসুন, চাল, মুগ ডাল, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া, পাটজাত পণ্য, তামাক, প্লাস্টিক, নীটওয়্যার, কাঠ ও পানীয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ মিয়ানমারে মোট ২ কোটি ৫১ লাল ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। একই সময়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ৯ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পণ্য।