পুতিন: বেলারুশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন রাশিয়ার ওপর হামলার শামিল

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পোল্যান্ডকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিবেশী এবং মিত্র বেলারুশের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন রাশিয়ার ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

২১ জুলাই, শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে এই মন্তব্য করেছেন পুতিন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, মস্কো বেলারুশকে রক্ষা করার জন্য যে কোনও উপায় ব্যবহার করবে। প্রসঙ্গত, বেলারুশ সম্ভাব্য যে কোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি ইউনিয়ন গঠন করেছে। 

রুশ প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পশ্চিম ইউক্রেনে অভিযান চালানোর জন্য একটি পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান ইউনিট গঠন করার পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেছে। অতীতে পশ্চিম ইউক্রেন পোল্যান্ডের অংশ ছিল।

ক্রেমলিনের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ‘কিন্তু বেলারুশের ক্ষেত্রে এ রকম কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না। এটি ইউনিয়ন রাষ্ট্রের অংশ। বেলারুশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর অর্থ হবে রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে এর প্রতিক্রিয়া জানাব।' 

পুতিন কোনো প্রমাণ না দিয়ে বলেছেন, ‘এটা সবাই জানে যে তারা বেলারুশিয়ান ভূমি দখলের স্বপ্ন দেখে।'  পুতিন যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন, পোল্যান্ডের পশ্চিম অঞ্চলগুলো সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের উপহার ছিল।  

তিনি বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধন্যবাদ, স্ট্যালিনের পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ, পোল্যান্ড পশ্চিম জার্মানের উল্লেখযোগ্য অঞ্চল পেয়েছে। এটিই প্রকৃত ঘটনা। পশ্চিম পোলিশ অঞ্চলগুলো পোল্যান্ডকে স্ট্যালিনের দেওয়া উপহার ছিল। ওয়ারশে আমাদের বন্ধুরা কি এটা ভুলে গেছে? আমরা সবসময় তাদের এটা মনে করিয়ে দেবো।'  

সাবেক সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের নাতনি এবং নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক নিনা ক্রুশ্চেভা বলেছেন, ‘পুতিন এই মন্তব্যের মাধ্যমে পোল্যান্ডকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। অথচ তার পরিবর্তে দেশটি রাশিয়ার শত্রু হয়ে উঠছে।'   

নিনা ক্রুশ্চেভা মস্কো থেকে আল জাজিরাকে বলেছেন, 'এছাড়া তিনি ইউক্রেনীয়দের জন্যও একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন। অতীতে ইউক্রেন এবং পোল্যান্ড যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল না, তা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন তিনি। মূলত এটি ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে একটি বহুস্তরযুক্ত প্রচার বার্তা।'  

পোল্যান্ড পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য। দেশটি রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। পোল্যান্ড ইউক্রেন বা বেলারুশের কোনো এলাকা দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।  

পোল্যান্ডের স্পেশাল সার্ভিসের সমন্বয়কারী ডেপুটি মিনিস্টার স্ট্যানিস্লো জারিন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পিএপি নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘ক্রেমলিন পোল্যান্ড সম্পর্কে মিথ্যার পুনরাবৃত্তি করছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো সত্য ঘটনাকে মিথ্যা করার চেষ্টা করছে। ভ্লাদিমির পুতিন পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানোর জন্য আবারও ঐতিহাসিক সংশোধনবাদ ব্যবহার করছেন।' 

সম্প্রতি পোল্যান্ড বেলারুশ সীমান্তে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। গত মাসে রাশিয়ায় একটি সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের পরে ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর যোদ্ধারা বর্তমানে বেলারুশে অবস্থান করছেন। পিএপি জানিয়েছে, ওয়াগনার যোদ্ধারা বেলারুশে আসার পর ওয়ারশ নিরাপত্তা কমিটি ১৯ জুলাই, বুধবার সামরিক ইউনিটগুলোকে পূর্ব পোল্যান্ডে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকে পোল্যান্ড কিয়েভকে অস্ত্র দিয়ে আসছে। ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের দেশটিতে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। অবশ্য পুতিনের অভিযোগ, পোলিশ নেতারা এই সংঘাতের সুযোগে ইউক্রেনের ভূমি দখল করার চেষ্টা করছে।   

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স